ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিগত সরকারের প্রায় সব প্রকল্পই রাজনৈতিক প্রভাবে অনুমোদিত : ড. দেবপ্রিয়

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৭:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪
  • 52

অনলাইন ডেস্ক  :   বিগত সরকারের আমলে প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব ছিল। প্রায় সব প্রকল্পই রাজনৈতিক প্রভাবে অনুমোদন হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, শুধু তাই নয় সেই সময় উন্নয়নের নামে যে বয়ান সৃষ্টি করা হয়েছিল, এর বিপক্ষে কেউ কিছু করতে গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উন্নয়ন পরিস্থিতিটা পুরোটাই প্রশাসনের কাছে জিম্মি ছিল। রোববার (৩ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি ভবনে ৮৫ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ৩২ জন সচিব ওসিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।  

তিনি বলেন, উন্নয়ন বয়ানের পরিস্থিতি নিয়ে আজ আলোচনা হয়েছে। উন্নয়ন পরিস্থিতিটা পুরোটাই প্রশাসনের কাছে জিম্মি ছিল। মিটিংয়ে বক্তারা জানিয়েছেন, তারা পুরোটাই পরিস্থিতির শিকার ছিলেন। কেউ কেউ হেনস্থার শিকার হয়েছেন। দেবপ্রিয় বলেন, জবাবদিহির অভাবের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রকল্পের মাধ্যমে লুটপাট হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে দুর্বলতা ছিল। উন্নয়ন প্রশাসনের মধ্যে কিছু অসাধু কর্মকর্তা, রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়ীদের প্রভাব ছিল। অনেক আমলা রাজনৈতিক অভিলাসের কারণে এই ধরনের কাজে জড়িত ছিলেন বলেও তারা জানিয়েছেন।

শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান বলেন, ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প নেওয়ার আগেই জমি ক্রয় করে বেশি দামে প্রকল্পের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। তারা জেনে যেত, এখানে জমি কিনলে তিন গুণ দামে বিক্রি করা যাবে, এভাবে সরকারের টাকা লুটপাট করা হয়েছে। অন্যদিকে জমি বিক্রি করে লাভবান হওয়ার জন্য যেসব জায়গাতে প্রকল্প নেওয়ার উপকারিতা নাই, প্রকল্পের উপযুক্ত জায়গা না হলেও সেখানে প্রকল্পগুলো করা হয়েছে, জমি বিক্রি করে লাভবান হতে। প্রকল্পের জন্য যেসব যন্ত্রপাতি ক্রয় করার কথা বলা হয়েছে, সেগুলো আনার জন্য যে ই-টেন্ডার প্রক্রিয়া ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেখানেও দুর্নীতি করা হয়েছে। সেগুলো কীভাবে প্রভাবিত করা হয়েছে সেগুলোও আলোচনা হয়েছে। ঠিকাদারদের বাছাইয়ের ক্ষেত্র অনিয়ম করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিপূর্ণভাবে শেষ না করেও সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সেই কারণেই প্রকল্প থেকে অর্থনৈতিক বেনিফিট পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, কর্মকর্তারা সভায় বলেছেন—‘পেশাগতভাবে আমাদের ভেঙে ফেলা হয়েছে’। অনেক ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্নভাবে বদলি করে ও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। যে কারণে তারা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দলগতভাবে কাজ করতে পারেননি। এই কারণে প্রকল্পে অনিয়ম হয়েছে বলেও জানান তারা।

সভায় অনেক প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে ড. দেবপ্রিয় বলেন, হাইটেক পার্ক, কর্ণফুলী টানেল, জ্বালানি খাত, কর আহরণ, সামাজিক খাত, ব্যাংক ব্যবস্থাপনা নিয়েও আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। যে আলোচনা উঠে এসেছে—পেশাদার উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা খুবই দরকার। উন্নয়নের জন্য সক্ষম, স্বাধীন এবং যোগ্য পেশাজীবীদের কার্যকর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে যাতে কোনো বাধার সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়টিও তারা উল্লেখ করেছেন।

 

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

নারী মৈত্রী ও এডুকো বাংলাদেশের উদ্যোগে যুব সম্মেলন-২০২৪ অনুষ্ঠিত

বিগত সরকারের প্রায় সব প্রকল্পই রাজনৈতিক প্রভাবে অনুমোদিত : ড. দেবপ্রিয়

আপডেট সময় ০৭:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪

অনলাইন ডেস্ক  :   বিগত সরকারের আমলে প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব ছিল। প্রায় সব প্রকল্পই রাজনৈতিক প্রভাবে অনুমোদন হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, শুধু তাই নয় সেই সময় উন্নয়নের নামে যে বয়ান সৃষ্টি করা হয়েছিল, এর বিপক্ষে কেউ কিছু করতে গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। উন্নয়ন পরিস্থিতিটা পুরোটাই প্রশাসনের কাছে জিম্মি ছিল। রোববার (৩ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি ভবনে ৮৫ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ৩২ জন সচিব ওসিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।  

তিনি বলেন, উন্নয়ন বয়ানের পরিস্থিতি নিয়ে আজ আলোচনা হয়েছে। উন্নয়ন পরিস্থিতিটা পুরোটাই প্রশাসনের কাছে জিম্মি ছিল। মিটিংয়ে বক্তারা জানিয়েছেন, তারা পুরোটাই পরিস্থিতির শিকার ছিলেন। কেউ কেউ হেনস্থার শিকার হয়েছেন। দেবপ্রিয় বলেন, জবাবদিহির অভাবের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রকল্পের মাধ্যমে লুটপাট হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে দুর্বলতা ছিল। উন্নয়ন প্রশাসনের মধ্যে কিছু অসাধু কর্মকর্তা, রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়ীদের প্রভাব ছিল। অনেক আমলা রাজনৈতিক অভিলাসের কারণে এই ধরনের কাজে জড়িত ছিলেন বলেও তারা জানিয়েছেন।

শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান বলেন, ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প নেওয়ার আগেই জমি ক্রয় করে বেশি দামে প্রকল্পের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। তারা জেনে যেত, এখানে জমি কিনলে তিন গুণ দামে বিক্রি করা যাবে, এভাবে সরকারের টাকা লুটপাট করা হয়েছে। অন্যদিকে জমি বিক্রি করে লাভবান হওয়ার জন্য যেসব জায়গাতে প্রকল্প নেওয়ার উপকারিতা নাই, প্রকল্পের উপযুক্ত জায়গা না হলেও সেখানে প্রকল্পগুলো করা হয়েছে, জমি বিক্রি করে লাভবান হতে। প্রকল্পের জন্য যেসব যন্ত্রপাতি ক্রয় করার কথা বলা হয়েছে, সেগুলো আনার জন্য যে ই-টেন্ডার প্রক্রিয়া ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেখানেও দুর্নীতি করা হয়েছে। সেগুলো কীভাবে প্রভাবিত করা হয়েছে সেগুলোও আলোচনা হয়েছে। ঠিকাদারদের বাছাইয়ের ক্ষেত্র অনিয়ম করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিপূর্ণভাবে শেষ না করেও সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সেই কারণেই প্রকল্প থেকে অর্থনৈতিক বেনিফিট পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, কর্মকর্তারা সভায় বলেছেন—‘পেশাগতভাবে আমাদের ভেঙে ফেলা হয়েছে’। অনেক ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্নভাবে বদলি করে ও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। যে কারণে তারা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দলগতভাবে কাজ করতে পারেননি। এই কারণে প্রকল্পে অনিয়ম হয়েছে বলেও জানান তারা।

সভায় অনেক প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে ড. দেবপ্রিয় বলেন, হাইটেক পার্ক, কর্ণফুলী টানেল, জ্বালানি খাত, কর আহরণ, সামাজিক খাত, ব্যাংক ব্যবস্থাপনা নিয়েও আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। যে আলোচনা উঠে এসেছে—পেশাদার উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা খুবই দরকার। উন্নয়নের জন্য সক্ষম, স্বাধীন এবং যোগ্য পেশাজীবীদের কার্যকর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গেলে যাতে কোনো বাধার সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়টিও তারা উল্লেখ করেছেন।