ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গেন্ডারিয়ায় চাঞ্চল্যকর দুই অটোরিক্সা চালক হত্যার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারী গ্রেপ্তার

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৫:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪
  • 23

সিনিয়র রিপোর্টার

গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে গেন্ডারিয়া থানা এলাকায় দুই অটোরিক্সা চালককে হত্যা করে অটোরিক্সা ছিনতাইয়ের ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ জালাল সরদার ওরফে মাইকেল (২১), ফজলে রাব্বি ওরফে কালা (২৫) ও মো. ইমরান (৩০) নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির গেন্ডারিয়া থানা পুলিশ।

বৃহস্পডিবার (৭ নভেম্বর) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

গত ২১ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ১২টায় ভিকটিম রিক্সা চালক জিন্নাহ (৬০) গেন্ডারিয়ার জুরাইনের একটি গ্যারেজ থেকে অটোরিকশা নিয়ে ভাড়ার উদ্দেশে বের হন। পোস্তগোলা থেকে অজ্ঞাতনামা দু’জন যাত্রী নিয়ে ওই তারিখ দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টায় গেন্ডারিয়া থানার  আঞ্জুমান  কবর স্থানের সামনে পোঁছালে ওই দু’জন যাত্রী পিছন থেকে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতরভাবে আঘাত করে। ভিকটিমের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে অজ্ঞাতনামা দু’জন যাত্রী পালিয়ে যায়।

উপস্থিত লোকজন ভিকটিমকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভিকটিম জিন্নাহর ছেলে মো. ইউসুফ হোসেনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গেন্ডারিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়।

এই মামলার তদন্ত চলাকালীন গত ১৫ অক্টোবর রাত আনুমানিক ২টা ৫২মিনিটে গেন্ডারিয়ার দ্বীননাথ সেন রোডে কচিকাচা বিদ্যানিকেতন গলিতে রিক্সা চালক আনোয়ার (৪০) কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় আঘাত করে হত্যা করে আরো একটি অটোরিক্সা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় গত ২১ অক্টোবর ভিকটিমের চাচাতো ভাই মো. মানিকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গেন্ডারিয়া থানায় আরো একটি হত্যা মামলা রুজু হয়।

দুটি মামলার ঘটনা বিশ্লেষন করে দেখা যায়, দুটি ঘটনারই মোডাস অপারেন্ডি (অপরাধের কৌশল) একই ধরনের। পুলিশ নিশ্চিত হয় একটি নির্দিষ্ট অপরাধী চক্র এই ধরণের অপরাধের সাথে জড়িত। তদন্তকালে ঘটনাস্থলসহ আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনাসহ সকল ধরনের তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় দু’জন ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হয় এই একই অপরাধী চক্র দুটি হত্যার ঘটনায় জড়িত। তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয় দু’জনের মধ্যে একজনের নাম জালাল সরদার ওরফে মাইকেল। পরবর্তী সময়ে গত ২৪ অক্টোবর ভোর সাড়ে ৫টায় পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে গেন্ডারিয়া থানা পুলিশ।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জালাল দুটি হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। সে জানায় আঞ্জুমান  কবর স্থানের পাশে অটোরিক্সা চালক জিন্নাহ হত্যার ঘটনায় তার সাথে ফজলে রাব্বি কালাও ছিলো কিন্তু দ্বীননাথ সেন রোডে কচিকাচা বিদ্যানিকেতন গলিতে অটোরিক্সা চালক আনোয়ারকে হত্যাসহ রিক্সা ছিনতাইয়ের ঘটনা সে একাই করেছে। সে জানায় এই ছিনতাইকৃত অটোরিক্সাটি গেন্ডারিয়ার মো. ইমরান (৩০) নামে একজনের নিকট ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। ২৫ অক্টোবর রাত ১টা ৫৫মিনিটে গেন্ডারিয়া থানা পুলিশ ডিআইটি প্লট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মৃত আনোয়ারের ছিনতাইকৃত অটোরিক্সাটি মো. ইমরান এর হেফাজত থেকে উদ্ধার করে এবং ছিনতাই হওয়া অটোরিক্সা ক্রয়ের অপরাধে তাকে গ্রেপ্তার করে পরবর্তীতে তাকে আদালতে পাঠানো করে।

গ্রেপ্তারকৃত জালাল সরদার ওরফে মাইকেল আঞ্জুমান কবর স্থানের সামনে অটোরিক্সা ছিনতাই ও রিক্সা চালক আনোয়ার হত্যার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ২৫ অক্টোবর বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে।

পরবর্তী সময়ে গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় শনিবার (৩ নভেম্বর) দিবাগত রাত ৩টায় গেন্ডারিয়ার কবর স্থান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ফজলে রাব্বি ওরফে কালাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওইদিন তাকে আদালতে পাঠানো হলে ফজলে রাব্বি ওরফে কালা অটোরিক্সা চালক জিন্নাহ হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে এবং জিন্নাহ হত্যার ঘটনায় মাইকেলের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে। গ্রেফতারকৃত মাইকেলও জিন্নাহ হত্যার ঘটনার কথা স্বীকার করে ৬ নভেম্বর বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে। দুটি মামলারই সুষ্ঠু তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

গেন্ডারিয়ায় চাঞ্চল্যকর দুই অটোরিক্সা চালক হত্যার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারী গ্রেপ্তার

আপডেট সময় ০৫:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪

সিনিয়র রিপোর্টার

গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে গেন্ডারিয়া থানা এলাকায় দুই অটোরিক্সা চালককে হত্যা করে অটোরিক্সা ছিনতাইয়ের ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ জালাল সরদার ওরফে মাইকেল (২১), ফজলে রাব্বি ওরফে কালা (২৫) ও মো. ইমরান (৩০) নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির গেন্ডারিয়া থানা পুলিশ।

বৃহস্পডিবার (৭ নভেম্বর) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

গত ২১ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ১২টায় ভিকটিম রিক্সা চালক জিন্নাহ (৬০) গেন্ডারিয়ার জুরাইনের একটি গ্যারেজ থেকে অটোরিকশা নিয়ে ভাড়ার উদ্দেশে বের হন। পোস্তগোলা থেকে অজ্ঞাতনামা দু’জন যাত্রী নিয়ে ওই তারিখ দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টায় গেন্ডারিয়া থানার  আঞ্জুমান  কবর স্থানের সামনে পোঁছালে ওই দু’জন যাত্রী পিছন থেকে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতরভাবে আঘাত করে। ভিকটিমের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে অজ্ঞাতনামা দু’জন যাত্রী পালিয়ে যায়।

উপস্থিত লোকজন ভিকটিমকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভিকটিম জিন্নাহর ছেলে মো. ইউসুফ হোসেনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গেন্ডারিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়।

এই মামলার তদন্ত চলাকালীন গত ১৫ অক্টোবর রাত আনুমানিক ২টা ৫২মিনিটে গেন্ডারিয়ার দ্বীননাথ সেন রোডে কচিকাচা বিদ্যানিকেতন গলিতে রিক্সা চালক আনোয়ার (৪০) কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় আঘাত করে হত্যা করে আরো একটি অটোরিক্সা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় গত ২১ অক্টোবর ভিকটিমের চাচাতো ভাই মো. মানিকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গেন্ডারিয়া থানায় আরো একটি হত্যা মামলা রুজু হয়।

দুটি মামলার ঘটনা বিশ্লেষন করে দেখা যায়, দুটি ঘটনারই মোডাস অপারেন্ডি (অপরাধের কৌশল) একই ধরনের। পুলিশ নিশ্চিত হয় একটি নির্দিষ্ট অপরাধী চক্র এই ধরণের অপরাধের সাথে জড়িত। তদন্তকালে ঘটনাস্থলসহ আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনাসহ সকল ধরনের তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় দু’জন ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হয় এই একই অপরাধী চক্র দুটি হত্যার ঘটনায় জড়িত। তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয় দু’জনের মধ্যে একজনের নাম জালাল সরদার ওরফে মাইকেল। পরবর্তী সময়ে গত ২৪ অক্টোবর ভোর সাড়ে ৫টায় পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে গেন্ডারিয়া থানা পুলিশ।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জালাল দুটি হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। সে জানায় আঞ্জুমান  কবর স্থানের পাশে অটোরিক্সা চালক জিন্নাহ হত্যার ঘটনায় তার সাথে ফজলে রাব্বি কালাও ছিলো কিন্তু দ্বীননাথ সেন রোডে কচিকাচা বিদ্যানিকেতন গলিতে অটোরিক্সা চালক আনোয়ারকে হত্যাসহ রিক্সা ছিনতাইয়ের ঘটনা সে একাই করেছে। সে জানায় এই ছিনতাইকৃত অটোরিক্সাটি গেন্ডারিয়ার মো. ইমরান (৩০) নামে একজনের নিকট ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে। ২৫ অক্টোবর রাত ১টা ৫৫মিনিটে গেন্ডারিয়া থানা পুলিশ ডিআইটি প্লট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মৃত আনোয়ারের ছিনতাইকৃত অটোরিক্সাটি মো. ইমরান এর হেফাজত থেকে উদ্ধার করে এবং ছিনতাই হওয়া অটোরিক্সা ক্রয়ের অপরাধে তাকে গ্রেপ্তার করে পরবর্তীতে তাকে আদালতে পাঠানো করে।

গ্রেপ্তারকৃত জালাল সরদার ওরফে মাইকেল আঞ্জুমান কবর স্থানের সামনে অটোরিক্সা ছিনতাই ও রিক্সা চালক আনোয়ার হত্যার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ২৫ অক্টোবর বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে।

পরবর্তী সময়ে গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় শনিবার (৩ নভেম্বর) দিবাগত রাত ৩টায় গেন্ডারিয়ার কবর স্থান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ফজলে রাব্বি ওরফে কালাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওইদিন তাকে আদালতে পাঠানো হলে ফজলে রাব্বি ওরফে কালা অটোরিক্সা চালক জিন্নাহ হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে এবং জিন্নাহ হত্যার ঘটনায় মাইকেলের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে। গ্রেফতারকৃত মাইকেলও জিন্নাহ হত্যার ঘটনার কথা স্বীকার করে ৬ নভেম্বর বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে। দুটি মামলারই সুষ্ঠু তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।