সিনিয়র রিপোর্টার
ছাত্র-জনতার মতামত না নিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী চরিত্র ধারণ করে এমন কাউকে উপদেষ্টা পরিষদে মেনে নেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে যে ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছেন। আহত হয়েছেন তাদের চাওয়া বা আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থি ব্যক্তিদের আমরা উপদেষ্টা পরিষদে দেখতে চাই না।
সোমবার (১১ নভেম্বর) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। ছাত্র-জনতার অংশীদারত্ববিহীন সিদ্ধান্তে উপদেষ্টা নিয়োগ এবং এতে ফ্যাসিবাদী দোসরদের স্থান দিয়ে শহীদের রক্তের অবমাননার অভিযোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে শুরু হয় এ কর্মসূচি।
কর্মসূচিতে হাসনাত বলেন, ছাত্র-জনতার সঙ্গে মশকরা করা হচ্ছে। ধানমন্ডির ৩২ কে যারা কাবা মনে করে তাদের উপদেষ্টা করা হয়েছে। কার মদতে, প্রশ্রয়ে আওয়ামী পুনর্বাসনের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে আমরা তা জানতে চাই। ফ্যাসিবাদের যারা দোসর, ’২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে কোনো ফরম্যাটেই তাদের দেখতে চাই না। উপদেষ্টা হিসেবে যাদের নিয়োগ দিচ্ছেন গত ১৬ বছরে তারা কী করেছেন তার ইতিহাস আমরা জানতে চাই। আমাদের হারাবার কিছু নেই। ৫ আগস্টের পর আমাদের বোনাস লাইফ। অন্তর্বর্তী সরকারকে নিরাপত্তা দিতে শিক্ষার্থীরা বারবার রাস্তায় নামবেন না।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, আমরা আগেই বলেছি ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলা চাই। বাংলা থেকে ফ্যাসিবাদকে উচ্ছেদ করতে হবে। সেইসঙ্গে তাদের দোসরদেরও উচ্ছেদ করতে হবে। ফ্যাসিবাদ মুক্ত করতে আমরা আবারো রাস্তায় নামতে বাধ্য হব।
এসময় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ছাত্র-জনতার অংশীদারত্ববিহীন সিদ্ধান্তে উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টি কোনো ভাবেই মেনে নেবে না ছাত্রসমাজ। এ সময় তারা বলেন, জুলাই-আগস্টে ফেসবুকে ২/১টা পোস্ট দিয়েই উপদেষ্টা হয়ে যাচ্ছেন, কীভাবে হচ্ছে সেটি বোঝা দরকার।
উত্তরবঙ্গের কোনো জেলার কেউ উপদেষ্টা নিয়োগ না পাওয়ার সমালোচনাও করেন আন্দোলনকারীরা। অবিলম্বে এমন নিয়োগ ছাত্র সমাজ মেনে নেবে না বলেও হুঁশিয়ারি শিক্ষার্থীদের। তাদের দাবি, চট্টগ্রাম অঞ্চল ও এনজিওবাদী লোকদের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বৈষম্য করা হচ্ছে। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নিয়োগ কোন ক্যাটাগরিতে হয় জানতে চান শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে যাদের সমর্থন ছিল না, তারা কীভাবে জায়গা পেয়েছে। জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিতে গণভবনে ছিল, তারা কেমনে নিয়োগ পায়! নতুন শপথ নেওয়া ব্যবসায়ী সেখ বশির উদ্দিন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীকে দ্রুত অপসারণ করতে হবে।
সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘আমাদের অবহিত না করে ফ্যাসিবাদের দোসরদের উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এভাবে যদি চলতে থাকে, আমরা নতুন সরকার গঠন করতে বেশি সময় লাগবে না। ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা করতে আমরা রক্ত দিয়ে মাঠে থাকব। এ বিপ্লব আমরা নষ্ট করতে দেব না, নষ্ট হতে দেব না।’
মানববন্ধনে আরো বক্তব্য দেন সমন্বয়ক কানিস ফাতেমা, রাফিদ হাসান সাফওয়ান, রিফাদ রশীদ, তরিকুল ইসলাম, হাসিব আল ইসলাম প্রমুখ। এর আগে, একই দাবিতে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন একদল শিক্ষার্থী। বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা জানান, উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দোসরদের দেওয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, রবিবার (১০ নভেম্বর) বঙ্গবভনে শপথ নিয়েছেন নতুন তিন উপদেষ্টা। তারা হলেন-ব্যবসায়ী সেখ বশিরউদ্দীন, চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।