সিনিয়র রিপোর্টার
দেশের তৈরি পোশাক খাতে নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ কমছে। স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির ব্যবহার ও অনান্য খাতের তুলনায় সুযোগ-সুবিধা কম থাকায় এই খাতে তরুণ প্রজন্মের আগ্রহও কমে গেছে। ‘বাংলাদেশে আরএমজি শিল্পের প্রযুক্তির আপগ্রেডেশন’ শীর্ষক এক সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০২৩ সালে এ খাতে নারী শ্রমিক ৫৩ শতাংশে নেমে এসেছে; যা ২০১৪ সালে ৫৬ শতাংশ ছিল। দেশে পোশাকশিল্পের শুরুতে নারী পোশাক শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৮০ শতাংশের বেশি এবং এই ধারা বহু বছর ধরে অব্যাহত ছিল।
রবিবার (৮ ডিসেম্বর) ঢাকায় লেক শোর হোটেলে অনুষ্ঠিত উন্নয়নবিষয়ক বার্ষিক বিআইডিএস সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক কাজী ইকবাল এই ফলাফল প্রকাশ করেন। সেশনটি পরিচালনা করেন ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির। সেখানে চারটি ভিন্ন গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।
গবেষণায় বলা হয়েছে, কারখানার শ্রমিকের সংখ্যা, মেশিন অপারেটর ও হেলপার কমেছে। সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, গত ১০ বছরে তৈরি পোশাক খাতের বেশিরভাগ উপখাতে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে। এ খাতের আটটি উপখাতের মধ্যে ছয়টিতে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে; বেড়েছে মাত্র দুটিতে।
বিআইডিএসের গবেষক কাজী ইকবাল উপস্থাপনায় দেখিয়েছেন, গত ১০ বছরে তৈরি পোশাকের উপখাতগুলোর মধ্যে শুধু হোম টেক্সটাইল ও ওভেন খাতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। বাকি ছয়টি খাত অর্থাৎ নিট লনজারি, ডেনিম ট্রাউজার, সোয়েটার, টি-শার্ট, জ্যাকেট, ওভেন ট্রাউজার ও ওভেন শার্টে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ কমেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে জ্যাকেটে। এই উপখাতে ২০১৪ সালে নারী শমিকের অংশগ্রহণ ছিল ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ; ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ২২ শতাংশ।
উপস্থাপনায় বলা হয়, তৈরি পোশাক খাত গত ১০ বছরে অনেক বেশি পুঁজিঘন হয়েছে। সেই সঙ্গে শমিকপ্রতি যন্ত্রের সংখ্যা কমেছে। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে মেশিন অপারেটর ও হেলপারদের ওপর।
নারী শমিকদের সংখ্যা হ্রাসের সঙ্গে আরেকটি পরিবর্তন হয়েছে গত ১০ বছরে। তা হলো উৎপাদন খাতে প্রযুক্তি জানা মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে। এই খাতে বিএসসি ও ডিপ্লোমা টেক্সটাইল প্রকৌশলী বেড়েছে। কিন্তু টেক্সটাইল প্রকৌশলে নারীর সংখ্যা খুবই নগণ্য। এ ছাড়া বিএসসি শিল্প প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমা শিল্প প্রকৌশলীর সংখ্যা বেড়েছে।
প্রশ্নোত্তর পর্বে বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, এই যে প্রযুক্তির ব্যবহারের সঙ্গে নারীর শমশক্তিতে অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে, এর সামাজিক প্রভাব আছে। বিষয়টি কি একেবারে বাজারের হাতে দেওয়া হবে, নাকি এখানে নারীদের অংশগ্রহণের হার বজায় রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে?
এক প্রশ্নের উত্তরে কাজী ইকবাল বলেন, নারীরা কোথায় কোথায় প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে সমস্যার মুখে পড়ছেন, তা চিহ্নিত করে তাদের নতুন দক্ষতা শেখানো দরকার। তাহলে নারীদের এই ঝরে পড়ার হার রোধ করা সম্ভব।
বিআইডিএসের গবেষক মঞ্জুর আহমেদ বলেন, দেশে এই মুহূর্তে প্রযুক্তির কারণে বড় ধরনের ছাঁটাই হচ্ছে, তা নয়। তিনি বলেন, চীনে প্রযুক্তির কারণে তিন শতাংশ ছাঁটাই হলেও দুই শতাংশ নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া সবখানেই থাকবে। ফলে দরকার হচ্ছে নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা বা তাদের নতুন দক্ষতা শেখানো এবং প্রয়োজনবোধে নতুন জায়গায় নিয়ে যাওয়া।