সিনিয়র রিপোর্টার
প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবি করছে অধিকাংশ রাজননৈতিক দল। এই নির্বাচনের জন্য এক বছর সময় যথেষ্ট বলেও মনে করছেন এই দলগুলোর নেতারা। এরমধ্যে বামপপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোও রয়েছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব যে বক্তব্য দিয়েছেন তা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া দেখা দেখা দিয়েছে।
এদিকে এই নির্বাচনের জন্য ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নেওয়া যেতে পারে বলে মনে করছে তারা এর বেশি নয়। বিভিন্ন বামপন্থী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। এমন কি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলও দ্রুত নির্বাচন চায়।
বামপন্থী ওই বিভিন্নি রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য করার জন্য যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন ততটুকু করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচনের জন্য ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রয়োজনীয় বলেও তারা মনের করেন। নির্বাচনের জন্য এতো সময় প্রয়োজন নেই। নির্বাচন যত দেরি হবে সংকট ততই বাড়বে।
বামপন্থী নেতাদের মতে, নির্বাচনই শেষ কথা। তাই নির্বাচনই এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য হতে হবে। পাশাপাশি নির্বাচনের সময় সীমা নির্ধারণ করতে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার দাবি জানান।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির(সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করা এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া এটা জনগণের দাবি। এটা আমরা বার বার বলে আসছি। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বললেন একটা সময়ের কথা। আবার প্রধান উপদেষ্টা প্রেস সচিব বললেন আরেকটা সময়ের কথা। নির্বাচনের জন্য ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত সময় এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রয়োজনীয়। এই নির্বাচনের জন্য ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় যথেষ্ট। এর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সময় সীমা নির্ধারণ ও পদক্ষেপগুলো নিতে হবে।
বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, যেহেতু নির্বাচনই শেষ কথা। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দরকার। নির্বাচনকেই সরকারের প্রধান লক্ষ্য করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। সেক্ষেত্রে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নির্বাচন জন্য যথেষ্ট। তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি তিন মাসে নির্বাচন দিতে পারে, এই সরকার তিন মাসে না পারলে ৬ মাসে পারবে, সেটা না পারলে ৯ মাসে পারবে। এক বছর যথেষ্ট সময়। এর বেশি সময়ের তো কোনো যৌক্তিকতা নেই।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে যে সময়সীমা বলেছেন- সেটা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। কেননা, তিনি বলেছেন, কিছু সংস্কার করে যদি নির্বাচন দিতে হয়; তা ২০২৫ এর ডিসেম্বরে হতে পারে। আর সব সংস্কার করার পর নির্বাচন হলে তা ২০২৬ এর প্রথমার্ধে হতে পারে। এর মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থান বা সংস্কারবিরোধী আন্দোলনের যে প্রত্যাশা- তা পূরণ হবে না। কেননা, বিগত তিনটি নির্বাচনে দেশের প্রায় ২ কোটি নতুন ভোটার ভোট দিতে পারেনি। তারা আগ্রহ নিয়ে বসে আছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরে আসার। তাই সব সংস্কার নয়; মোটামুটি সংস্কার করে নির্বাচনটা ২০২৫ এর ডিসেম্বর মধ্যে আয়োজন করা দরকার।
তিনি বলেন, সংবিধানে আছে সংসদ ভেঙে দেওয়ার তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন। সেটা তো আর সম্ভব হয়নি। এখন প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। এর জন্য একটা টাইম ফ্রেম দেওয়া দরকার। সরকার এখনও সেটা দিতে পারেনি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এটা করতে হবে। গণতান্ত্রিক সরকার এসে বাকি সংস্কার করবে, এটাই নিয়ম। তা না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের যে প্রত্যাশা তা প্রশ্ন বিদ্ধ থেকে যাবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে ১৪ দলের নেতারা জানান, যত দ্রুত সম্ভব সরকারকে নির্বাচন দিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি দ্রুত শেষ করতে হবে। বর্তমান সংকট দূর করতে নির্বাচনই একমাত্র সমাধান।