সিনিয়র রিপোর্টার : বিচারব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, আমি চাইবো বিচার বিভাগ ও বিচারালয়কে যেন কোনভাবে রাজনীতিকরণ করা না হয়। এখানে বিচারক ও আইনজীবীদের সম্মিলিত ও মেধাপুষ্ট দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই কেবল সুবিচারের লক্ষ্য অর্জিত হতে পারে এবং তবেই বিচার বিভাগের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকবে। আমাদের সুপ্রিম কোর্টের এই বিচার অঙ্গন পারস্পরিক সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও ভালোবাসায় আলোকিত হোক, এটিই আমার প্রত্যাশা।
রোববার (৮ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনায় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এসব কথা বলেন। রীতি অনুসারে রোববার প্রধান বিচারপতিকে সংবর্ধনা জানানো হয়। সংবর্ধনায় প্রথমে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন প্রধান বিচারপতির কর্মময় জীবন নিয়ে বক্তব্য দেন। পরে বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির।
প্রধান বিচারপতি বলেন, একটি কথা একটু অপ্রিয় হলেও বলতে চাই, কোন বিষয়ে ভালোভাবে না জেনে বা যথেচ্ছভাবে বিচারক ও আদালত সম্পর্কে কটু মন্তব্য মোটেই সভ্যতার ইঙ্গিত বহন করে না। সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমানের ভাষায় আমিও উচ্চারণ করতে চাই, কোনো বিচারকই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নন। বিচারকের রায়ের সমালোচনা করার অধিকার বাকস্বাধীনতার এক অংশ বলে আমি মনে করি। আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে সংবিধানে এই বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে।
সংবাদপত্র দেশের সমাজব্যবস্থার প্রতিবিম্ব উল্লেখ করে ওবায়দুল হাসান বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার যেসব সাংবাদিক এই অঙ্গনে কাজ করেন, তাদের বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে দেশের সাধারণ নাগরিকেরা বিচারাঙ্গন সম্বন্ধে ধারণা পেয়ে থাকেন। যেহেতু বিচারকেরা সংবাদকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে কোনো বক্তব্য প্রদান করতে পারেন না, তাই সাংবাদিক বন্ধুদের প্রতি তার অনুরোধ, আদালত বা বিচারক–সম্পর্কিত কোনো সংবাদ পরিবেশনে তারা যেন যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করেন।
বিচারকের রায়ের সমালোচনা করার অধিকার বাকস্বাধীনতার একটি অংশ উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে সংবিধানে এই বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে। তবে কেউ যদি স্বাধীনতার অপব্যবহার করে, তা সংবাদমাধ্যমই হোক, আইনজীবীই হোক বা যে কেউ হোক, তাকে শায়েস্তা করার জন্য আদালতের হাত যথেষ্টই লম্বা।’
তিনি আরও বলেন, মানবসমাজ ও বিচারপ্রার্থীর কল্যাণে এবং দ্রুত ও দুর্নীতিমুক্ত সুবিচার নিশ্চিতকরণে নিবেদিত হওয়ার মাধ্যমে মানুষের প্রতি, সমাজের প্রতি একজন বিচারক বা আইনজীবীর ভালবাসা মূর্ত হতে পারে। এর মাঝেই আমরা পেতে পারি আমাদের কর্মজীবনের সার্থকতা। সংবিধানের প্রতি লক্ষ্য রেখে বিচার প্রশাসনকে রাখতে হবে স্বচ্ছদুর্নীতিমুক্ত, স্বাধীন এবং সোশ্যাল জাস্টিস তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। একটি দুর্নীতিমুক্ত বিচারব্যবস্থা দেশ ও জাতির জন্য গর্বের। আমার দায়িত্ব পালনকালে আমার সতীর্থ বিচারকবৃন্দ এবং আপনারা আইনজীবীবৃন্দের সুচিন্তিত পথ ধরে একটি দুর্নীতিমুক্ত বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাব। আমি আমাদের বিচারব্যবস্থাকে আধুনিক করে গড়ে তুলতে এবং সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে একটি দীর্ঘমেয়াদী জুডিসিয়াল প্ল্যান তৈরি করতে চাই। আমার উত্তরসূরীগণ যেন এই প্ল্যান বা পরিকল্পনা ধরে আগামীতে এগিয়ে যেতে পারেন। অনাগত ভবিষ্যত প্রজন্মের কল্যাণে এরূপ একটি প্ল্যান তৈরির জন্য সহযোগীতা লাগবে আইনজীবীগণের ও আমার সহকর্মীদের, সর্বোপরি রাষ্ট্র পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলের।
দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে সংবর্ধনা দেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির। এ সময় উপস্থিতি ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এম আমীর–উল ইসলাম, এ এফ হাসান আরিফ, ফিদা এম কামাল, আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা। ছিলেন অসংখ্য আইনজীবী।
উল্লেখ্য, দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে গত ২৬ সেপ্টেম্বর শপথ নেন ওবায়দুল হাসান। ওই সময় সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ চলছিলো। অবকাশ শেষে রোববার আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়।