ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০২৫, ২০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে প্রথমবার জিকা ভাইরাসের গুচ্ছ সংক্রমণ শনাক্ত

সিনিয়র রিপোর্টার

দেশে প্রথমবারের মতো জিকা ভাইরাসে ক্লাস্টার (গুচ্ছ) সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ এক স্থানে একাধিক ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসটির অস্তিত্ব মিলেছে। সোমবার (৩ মার্চ) আইসিডিডিআর,বি’র ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিষ্ঠানটির তথ্যানুযায়ী, একই এলাকার পাঁচ ব্যক্তি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এলাকাটির নাম প্রকাশ করেনি সংস্থাটি। এক দশক আগে বাংলাদেশে প্রথম জিকা ভাইরাস শনাক্তের পর এবার গুচ্ছ সংক্রমণের দেখা মিলল।

ক্লাস্টার সংক্রমণের বিষয়ে আইসিডিডিআর,বি বলছে, গবেষকরা ২০২৩ সালে ঢাকার রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে আসা জ্বরে আক্রান্ত ১৫২ রোগীর নমুনা পিসিআরভিত্তিক পরীক্ষা করেন। এতে পাঁচজনের নমুনায় জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়, যাদের বসবাস এক কিলোমিটারের মধ্যে। এই রোগীদের কেউ-ই দুই বছরের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণ করেননি। তারা পরীক্ষা করানও একই সময়ে। ফলে বিষয়টি একই সংক্রমণ চক্রের অংশ হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এ ছাড়া পাঁচজন আক্রান্তের মধ্যে একজন ডেঙ্গু ভাইরাসেও সংক্রমিত হয়েছিলেন।

আইসিডিডিআর,বি’র ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সমগ্র জিনোম সিকোয়েন্সিং এবং তুলনামূলক বিশ্লেষণ ব্যবহার করে দেখা যায়, বাংলাদেশি এই স্ট্রেইন (অণুজীবের উপপ্রকার) এশিয়ান লাইনেজের অন্তর্গত। এতে আক্রান্ত হলে মাইক্রোসেফালি ও অন্যান্য স্নায়বিক রোগের মতো গুরুতর সংকট দেখা দিতে পারে। এই স্ট্রেইন ২০১৯ সালে কম্বোডিয়া ও চীনে দেখা যায়।

এতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু, উষ্ণ তাপমাত্রা ও দীর্ঘ বর্ষাকাল এডিস মশার জন্য সর্বোত্তম প্রজনন পরিস্থিতি তৈরি করে। এ কারণে মশাবাহিত অনেক রোগ হয়। ডেঙ্গু ছাড়াও এখানে চিকুনগুনিয়া দেখা গিয়েছিল। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো জিকাও এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ১৯৪৭ সালে উগান্ডায় প্রথম জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়, তবে তা বানরের শরীরে। এর পর ১৯৫২ সালে প্রথম মানবদেহে শনাক্ত হয়। এর পর তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের অনেক দেশে।

জিকা আক্রান্তের লক্ষণ ডেঙ্গুর মতো হলেও ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে না। বছরজুড়ে মানুষের শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। জিকা ভাইরাসে আক্রান্তের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। জিকা আক্রান্ত হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হলে অথবা পরে জিকা আক্রান্ত হলে শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে শিশুর জন্ম হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৬ সালে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালিত একটি পর্যালোচনা গবেষণায় প্রথমবারের মতো দেশে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি উঠে আসে। ওই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল ২০১৪ সালে। যদিও এই রোগীর বিদেশ ভ্রমণের কোনো ইতিহাস ছিল না। বিষয়টিতে ধারণা করা হয়, ২০১৫ সালে ব্রাজিলে প্রাদুর্ভাবের আগেই বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস গোপনে সংক্রমিত হচ্ছিল।

ট্যাগস

দেশে প্রথমবার জিকা ভাইরাসের গুচ্ছ সংক্রমণ শনাক্ত

দেশে প্রথমবার জিকা ভাইরাসের গুচ্ছ সংক্রমণ শনাক্ত

আপডেট সময় এই মাত্র

সিনিয়র রিপোর্টার

দেশে প্রথমবারের মতো জিকা ভাইরাসে ক্লাস্টার (গুচ্ছ) সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। অর্থাৎ এক স্থানে একাধিক ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসটির অস্তিত্ব মিলেছে। সোমবার (৩ মার্চ) আইসিডিডিআর,বি’র ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিষ্ঠানটির তথ্যানুযায়ী, একই এলাকার পাঁচ ব্যক্তি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এলাকাটির নাম প্রকাশ করেনি সংস্থাটি। এক দশক আগে বাংলাদেশে প্রথম জিকা ভাইরাস শনাক্তের পর এবার গুচ্ছ সংক্রমণের দেখা মিলল।

ক্লাস্টার সংক্রমণের বিষয়ে আইসিডিডিআর,বি বলছে, গবেষকরা ২০২৩ সালে ঢাকার রোগ নির্ণয় কেন্দ্রে আসা জ্বরে আক্রান্ত ১৫২ রোগীর নমুনা পিসিআরভিত্তিক পরীক্ষা করেন। এতে পাঁচজনের নমুনায় জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়, যাদের বসবাস এক কিলোমিটারের মধ্যে। এই রোগীদের কেউ-ই দুই বছরের মধ্যে বিদেশ ভ্রমণ করেননি। তারা পরীক্ষা করানও একই সময়ে। ফলে বিষয়টি একই সংক্রমণ চক্রের অংশ হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এ ছাড়া পাঁচজন আক্রান্তের মধ্যে একজন ডেঙ্গু ভাইরাসেও সংক্রমিত হয়েছিলেন।

আইসিডিডিআর,বি’র ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সমগ্র জিনোম সিকোয়েন্সিং এবং তুলনামূলক বিশ্লেষণ ব্যবহার করে দেখা যায়, বাংলাদেশি এই স্ট্রেইন (অণুজীবের উপপ্রকার) এশিয়ান লাইনেজের অন্তর্গত। এতে আক্রান্ত হলে মাইক্রোসেফালি ও অন্যান্য স্নায়বিক রোগের মতো গুরুতর সংকট দেখা দিতে পারে। এই স্ট্রেইন ২০১৯ সালে কম্বোডিয়া ও চীনে দেখা যায়।

এতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু, উষ্ণ তাপমাত্রা ও দীর্ঘ বর্ষাকাল এডিস মশার জন্য সর্বোত্তম প্রজনন পরিস্থিতি তৈরি করে। এ কারণে মশাবাহিত অনেক রোগ হয়। ডেঙ্গু ছাড়াও এখানে চিকুনগুনিয়া দেখা গিয়েছিল। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো জিকাও এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ১৯৪৭ সালে উগান্ডায় প্রথম জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়, তবে তা বানরের শরীরে। এর পর ১৯৫২ সালে প্রথম মানবদেহে শনাক্ত হয়। এর পর তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের অনেক দেশে।

জিকা আক্রান্তের লক্ষণ ডেঙ্গুর মতো হলেও ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে না। বছরজুড়ে মানুষের শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। জিকা ভাইরাসে আক্রান্তের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। জিকা আক্রান্ত হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হলে অথবা পরে জিকা আক্রান্ত হলে শারীরিক নানা জটিলতা নিয়ে শিশুর জন্ম হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৬ সালে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালিত একটি পর্যালোচনা গবেষণায় প্রথমবারের মতো দেশে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি উঠে আসে। ওই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল ২০১৪ সালে। যদিও এই রোগীর বিদেশ ভ্রমণের কোনো ইতিহাস ছিল না। বিষয়টিতে ধারণা করা হয়, ২০১৫ সালে ব্রাজিলে প্রাদুর্ভাবের আগেই বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস গোপনে সংক্রমিত হচ্ছিল।