সিনিয়র রিপোর্টার : হরতালের দিনে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে ‘ক্রাইম সিন’ উল্লেখ করে কর্ডন টেপ দিয়ে ঘিরে দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট। ঘিরে রাখা অংশে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে আগের দিনের সংঘর্ষের ১০ ধরনের আলামত সংগ্রহ করেন। এসব আলামত কেমিকেল ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হবে।
রোববার (২৯ অক্টোবর) সকালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থলে যান। সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীরা কেউ প্রবেশ করতে পারছেন না। এর আগে শনিবারের সমাবেশের পর থেকেই কার্যত বন্ধ ছিল দলটির এই অফিস।
সরেজমিনে বেলা ১২টার পর দেখা যায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দুই পাশেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পাশে রাখা হয়েছে জলকামান ও প্রিজনভ্যান। কার্যালয়ের আশপাশে কোনো নেতা-কর্মী দেখা যায়নি। নয়াপল্টনের সড়ক দিয়ে কিছুক্ষণ পরপর টহল দিচ্ছে বিজেবি। এদিকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে ঘোরাফেরা করা দুই জনকে বিএনপির কর্মী সন্দেহে থানায় নেওয়া হয়েছে। ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া সকাল-সন্ধ্যা হরতালে নয়াপল্টনের এই সড়কে স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করছে। বন্ধ রয়েছে বিপনী-বিতানগুলো।
ক্রাইম সিন ইউনিটের সহকারী পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ১০ ধরনের আলামত সংগ্রহ করেছি। এগুলো কেমিকেল ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হবে। কেমিকেল ল্যাবের রিপোর্ট থেকে জানা যাবে, এখানে কী ধরনের এক্সেপ্লোশন হয়েছে, বিস্ফোরক রয়েছে। পরীক্ষায় কতদিন সময় লাগবে জানতে চাইলে তিনি সঠিক কোনো সময় বলতে পারেননি।
পল্টন জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) গোলাম রোহানী গণমাধ্যমকে বলেন, সকালে সিআইডির ৯ সদস্য নয়াপল্টনের ক্রাইম সিন হিসেবে চিহ্নিত এলাকায় প্রবেশ করেন এবং আলামত সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। এ সময় তাঁরা রাস্তায় পড়ে থাকা ছাই, বিভিন্ন দ্রব্য আলামত হিসেবে সংগ্রহ করেন। এর আগে শনিবার দিবাগত রাতে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে ক্রাইম জোন ঘোষণা করেন এবং কলাপসিবল গেটে তালা দিয়ে দেন।
প্রসঙ্গত- গতকাল শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে মহাসমাবেশে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, সে সময় পুলিশের একটি দল সাঁজোয়া যানসহ এগিয়ে আসতে থাকে নয়াপল্টনের দিকে। সেখানে ছররা গুলি-টিয়ার শেল ছোড়া হয়। আমীর খসরুর বক্তব্যের পর পরই সভামঞ্চের মাইক বন্ধ হয়ে যায় এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ নেতারা বসে পড়েন। ১০ মিনিটের ব্যবধানে টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেডের তোপের মুখে পুরো এলাকার নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন।
এরপর বিএনপি মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা নেমে যান মঞ্চ থেকে। এ সময় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি হ্যান্ডমাইকে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
পরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা-গুলিবর্ষণ এবং অসংখ্য নেতাকর্মী আহত করার প্রতিবাদে রোববার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা দেশব্যাপী হরতাল। তিনি পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের হামলার নিন্দা জানান এবং আজকের হরতাল সফল করার আহ্বান জানান।