সিনিয়র রিপোর্টার : পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে রেল সংযোগের উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি জানি যে আমাদের বিরোধী দল, আমাদের উন্নয়নটা চোখে দেখে না। চোখ থাকতে যারা অন্ধ, তাদের বলার কিছুই নেই। তাদের একটা পরামর্শ দিতে পারি- আমি কিন্তু ঢাকায় খুব আধুনিক আই ইন্সটিটিউট করেছি, চোখ থাকতেও যারা অন্ধ তারা সেই আধুনিক আই ইন্সটিটিউটে যেয়ে ১০ টাকা দিয়ে চোখ দেখিয়ে নেবেন।’
শনিবার (১১ নভেম্বর) কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশন থেকে ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ দোহাজারী-কক্সবাজার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ রেলপথের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিরোধী দলকে (বিএনপি) উদ্দেশ্য করে তিনি এসব কথা বলেন। এর মাধ্যমে ট্রেনযোগে কক্সবাজার যেতে দেশবাসীর দীর্ঘদিনের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, সেটিই বাস্তবে রূপ পেল।
পর্যটনের ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আসবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি মনে করি আজকের দিনটা বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটা গর্বের দিন। রেল সংযোগ করতে পেরে আমি সত্যিই খুব আনন্দিত। আমি জানি, দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের মানুষের একটা দাবি ছিল। রেলে কক্সবাজার আসা যাবে। আমরা সেটা করেছি। যমুনা সেতুর উপর দিয়ে সড়কের সঙ্গে যেহেতু রেল করে দিয়েছি, আমরা চাই উত্তরবঙ্গ পঞ্চগড় থেকে কক্সবাজার, কক্সবাজার থেকেও পঞ্চগড় এবং সুন্দরবন থেকে কক্সবাজার যেন রেলে আসতে পারে। সেই ব্যবস্থাও করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এখন অপেক্ষা করে থাকব, পঞ্চগড় থেকে কক্সবাজার, অথবা রাজশাহী থেকে কক্সবাজার আবার দক্ষিণ অঞ্চলের সুন্দরবন থেকে কক্সবাজার, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুরই বাদ যাবে কেন, সমগ্র বাংলাদেশ থেকেই যেন আসা যায়, সেই ব্যবস্থাটা আমরা নেব। কক্সবাজারবাসীকে আমরা বলব আমাদের অঞ্চলেও যাবেন, বেড়াতে যাবেন, ঘুরতে যাবেন। আমি বিশ্বাস করি পর্যটন ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আসবে। সেই ছোট বেলা থেকে শুনতাম চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন ছিল, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইন কবে আসবে। আজকে কক্সবাজার পর্যন্ত করা হয়েছে, এটা রামু পর্যন্ত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক যোগাযোগের মাধ্যমে আসতে চাই, ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সাথে আমরা সংযুক্ত হতে চাই। কাজেই সেটা মাথায় রেখে পরিকল্পনাটা নেওয়া হয়েছে।’
রেলপথ ব্যবহারে যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ গত পনের বছরে বদলে গেছে। রেল থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট সবকিছুই কিন্তু উন্নয়ন করেছি। রেলকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি, যেন খুব অল্প খরচে সাধারণ মানুষ চলাফেরা করতে পারে। আমি অনুরোধ করব, অত্যন্ত আধুনিক রেলস্টেশন করে দিয়েছি, যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। যেখানে-সেখানে যত্রতত্র ময়লা না ফেলা এবং কোনো জিনিস যেন হাত দিয়ে নষ্ট না করে। নিজেদের সম্পদ মনে করে যত্ন নিয়ে ব্যবহার করবেন।’
রেলসম্পদ একসময় অবহেলিত ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশটা আমাদের, দেশটাকে আমরা চিনি, আমরা জানি এর কী উন্নতি করতে হবে। ওই একজন-দুজন বাইরে থেকে এসেই আমাদের উপর খবরদারি আর আমাদেরকে পরামর্শ দেবে, সেটা হয় না। রেলে ওয়াইফাই দিয়ে দেব, রেলে বসে বসে যাতে কাজ করতে পারে। তাছাড়া আমরা এসে দেখলাম অনেকগুলো রেললাইন বন্ধ, রেল স্টেশন বন্ধ। কারণ পদ্মাসেতুর অর্থ যখন বন্ধ করে দিয়েছিল, তাদেরই উপদেশ ছিল এই দেশে রেল চলবে না, রেল লাভজনক না। রেলে সাধারণ মানুষ চলে, সস্তায় পণ্য পরিবহন হয়, এই ক্ষেত্রে সবসময় লাভ-লোকসানের হিসাব করা যায় না, মানুষের সেবাটাই বড়।’
সরকার মানুষের সেবার বিষয়টি বিবেচনা করেই কাজ করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যখনই কোনো কাজ করি আমরা সেটাই বিবেচনা করি, মানুষকে আমরা কতটা সেবা দিতে পারি। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম রেলের আলাদা মন্ত্রণালয় করব, কারণ এটা ছিল সড়ক সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত। আলাদা মন্ত্রণালয় করে আলাদা বাজেট দেওয়া শুরু করলাম। সারা বাংলাদেশকে এই নেটওয়ার্কে নিয়ে আসলাম। পয়ষট্টি সালে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ হয় সেই সময় বাংলাদেশ কিন্তু সম্পূর্ণ অরক্ষিতই ছিল। তার পরেও বাংলাদেশের সাথে রেলের সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’
যানবাহনে আগুন দেওয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আগুন দিয়ে পোড়ায়, তাদের তো শুধু চোখ না, মনই অন্ধকার। কাজেই এদের ব্যাপারে সকলকে সাবধান থাকতে হবে। এরা ধ্বংস জানে, সৃষ্টি করতে পারে না। আমরা সৃষ্টি করি, ওরা ধ্বংস করে। মানুষকে পুড়িয়ে মারবে, এটা সহ্য করা যায় না।’
দেশে চাহিদার চেয়ে বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি ব্যবসা করতে পছন্দ করতো, আমদানি করতে পছন্দ করতো। আমাদের লক্ষ্য ছিল নিজের পায়ে দাঁড়াবো।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, কক্সবাজারের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, রেলপথ মন্ত্রণালয় বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবির, রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল হাসান, দোহাজারী কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণকাজের প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন জিন্টিং।