সিনিয়র রিপোর্টার : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের পর বন্দরনগরী চট্টগ্রামে উদ্বোধন হচ্ছে মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী এক্সপ্রেসওয়ে। আজ (১৪ নভেম্বর) মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বন্দরনগরীর প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চট্টগ্রাম মহানগরীসহ উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাতায়াত ও যোগাযোগব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে নির্মিত এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ১৫.২০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৬.৫০ মিটার। চার লেনবিশিষ্ট ফ্লাইওভারটিতে ৩৬২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৬.৮০ মিটারের ১৪টি র্যাম্প নির্মিত হবে, যা আগামী বছরের জুনের মধ্যে শেষ হবে।
লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৫.২ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ের মধ্যে টাইগারপাস পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ হলেও বাকি রয়েছে ১৪টি র্যাম্পের কাজ। এর মধ্যে জিইসি মোড়ে একটি; টাইগারপাসে দুটি; আগ্রাবাদ এলাকার চারটি র্যাম্পের মধ্যে জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর সড়কে একটি, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার সড়কে একটি এবং আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে দুটি র্যাম্প; ফকিরহাটে একটি; নিমতলায় দুটি; সিইপিজেডে দুটি এবং কেইপিজেড এলাকায় দুটি র্যাম্প থাকবে। তবে টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এক কিলোমিটার অংশ ও র্যাম্পের কাজ বাকি রেখেই খুলে দেওয়া হচ্ছে এই এক্সপ্রেসওয়ে।
এক্সপ্রেসওয়ের নাম প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এর আগে গত ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, টানেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে একে অন্যের পরিপূরক। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সুবিধাগুলো হলো- বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হওয়ার মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে চট্টগ্রাম শহরের নতুন সড়ক নেটওয়ার্ক সৃষ্টি হবে। চট্টগ্রাম নগরীর সিইপিজেড, কেইপিজেডের সঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হওয়ায় শহরে যানজটের সমস্যা লাঘব হবে। চট্টগ্রাম শহর থেকে যাত্রীরা মাত্র ২০ মিনিটে বিমানবন্দরে যাতায়াত করতে পারবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের সংযোগের ফলে উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হওয়ার পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের যানজট সমস্যা নিরসন হবে। জনসাধারণের প্রতিদিনের যাতায়াতের সময় সাশ্রয় হবে। দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা বিস্তার করবে। সর্বোপরি যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবেন।
একই সঙ্গে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তিনটি প্রকল্প এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের উদ্বোধন করবেন তিনি। প্রকল্প চারটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৬ হাজার কোটি টাকা। অন্য দুটি প্রকল্প হলো– বাকলিয়া এক্সেস রোড ও ফৌজদারহাট-বায়েজিদ সংযোগ সড়ক প্রকল্প।
সিডিএর প্রকল্প তিনটির নামকরণ হয়েছে– ‘মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সিডিএ ফ্লাইওভার’, ‘জানে আলম দোভাষ সড়ক’ ও ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সড়ক’। এসব প্রকল্প উদ্বোধন উপলক্ষে নগরীর পতেঙ্গায় সুধী সমাবেশের আয়োজন করেছে সিডিএ।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পগুলো উদ্বোধনের ফলে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে যানজট দূর হবে। নগরীর মূল কেন্দ্র থেকে ২০ মিনিটে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছা যাবে, এখন সেখানে যেতে সময় লাগে এক ঘণ্টার বেশি।
বায়েজিদ সংযোগ সড়ক : প্রায় এক দশক আগে ‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের বহিঃসীমানা দিয়ে লুপ রোড নির্মাণসহ ঢাকা ট্রাংক রোড থেকে বায়েজিদ বোস্তামী রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্প হাতে নেয় সিডিএ। ২০১৩ সালের অক্টোবরে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৭২ কোটি টাকা এবং মেয়াদ ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর পর কয়েক দফা সময় ও ব্যয় বাড়ে। বর্তমানে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৫৩ কোটি টাকা। পুরোপুরি কাজ শেষ না হলেও সড়কটিতে যান চলাচল শুরু হয়েছে। ফলে ঢাকা থেকে আসা যানবাহন চট্টগ্রাম নগরে না ঢুকে সরাসরি পার্বত্য চট্টগ্রাম ও উত্তর চট্টগ্রামে যেতে পারে।
বাকলিয়া সংযোগ সড়ক : ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাকলিয়া সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় চউক। ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর একনেকে প্রকল্পটি পাস হয়। শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ২২০ কোটি ৭১ লাখ টাকা। সড়কটি নগরের সিরাজউদ্দৌলা সড়কের চন্দনপুরার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পাশ থেকে শুরু হয়ে শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়কে গিয়ে শেষ হয়েছে।
পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল : চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নকশা অনুযায়ী সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে এটি নির্মাণ করে দেশি প্রতিষ্ঠান ই-ইঞ্জিনিয়ারিং। ২০২২ সালের মাঝামাঝি এর কাজ শেষ হয়। বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলী নদীর মোহনায় ড্রাইডক ও বোটক্লাবের মাঝে ২৬ একর জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। এটি চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দর ১০ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের (পানির নিচে জাহাজের গভীরতা) জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা অর্জন করবে। একই সঙ্গে জাহাজ চলাচলের দূরত্ব কমবে।