সিনিয়র রিপোর্টার : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল বাতিলের দাবিতে ১৪১ বিশিষ্টজন যে বিবৃতি দিয়েছেন তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন ৩৮৫ জন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং বিচারক।
গত শুক্রবার গণমাধ্যমকে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল বাতিলের দাবিতে ১৪১ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার বিবৃতিটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বিবৃতির বিষয়টি বস্তুনিষ্ঠ নয়। বিবৃতিতে যেসব তথ্য-উপাত্তের উল্লেখ করা হয়েছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অসত্য ও বিভ্রান্তিকর।
বিবৃতিতে বিশিষ্টজনেরা বলেন, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। কমিশন তফসিল ঘোষণার আগে কমিশনের সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বহুবার আলোচনা করেছে এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য একাধিকবার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। কমিশনের এই আহ্বানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ও সমমনা দলগুলো কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেনি। এমনকি তাদেরকে কমিশন থেকে পৃথকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা সে আলোচনায় সাড়া দেয়নি। যা রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত।
তারা বলেন, সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের নামে অগ্নিসংযোগ, সন্ত্রাস, প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারকদের বাসভবনে হামলা, কর্তব্যরত পুলিশকে নির্মমভাবে হত্যা করে নিহত পুলিশের হেলমেট খুলে চাপাতি দিয়ে মাথায় কোপানো, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, হাসপাতালসহ অন্যান্য স্থাপনায় হামলা করা হয়েছে। এই একই মহল নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য ২০১৪ সালেও একইভাবে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, সড়কপথে বৃক্ষ কর্তন, নির্বাচন অফিসগুলোয় অগ্নিসংযোগ, ভোটারদের নির্মমভাবে প্রহার-এমনকি কর্তব্যরত প্রিজাইডিং অফিসারকে ব্যালট বাক্সের ওপরে কুপিয়ে হত্যা করার মতো নৃশংস ও বর্বরোচিত ভূমিকা নিয়েছিল। এখনও সেই একই মহল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তাকে একতরফা নির্বাচন তফসিল বলে আখ্যায়িত করে তা বাতিলের দাবি করছে।
বিবৃতিদাতারা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচনের বিধিসম্মত তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নিবন্ধিত সব দলের অংশগ্রহণের উন্মুক্ত সুযোগ বিদ্যমান। তাহলে কীভাবে এই তফসিল একতরফা হয় এবং কীভাবে অবসরপ্রাপ্ত কিছু সরকারি কর্মকর্তা কমিশনের সংবিধান সম্মত তফসিলকে একতরফা তফসিল হিসেবে আখ্যায়িত করে তা বাতিলের জন্য সুপারিশ করেন তা সর্বসাধারণের কাছে বোধগম্য নয়। তাকে ‘একতরফা তফসিল’ বলার কোনো অবকাশ আছে বলে আমরা মনে করি না।
অবসরপ্রাপ্ত কিছু সরকারি কর্মকর্তার বিবৃতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনরায় প্রবর্তনের বিষয়ে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো দলের একক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও দাবিকে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ বলে চালিয়ে দেওয়া ‘একতরফা’ বিষয়। তাছাড়া বাংলাদেশে এমন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হয়নি, যাতে এর প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাকে ২০০১ সালে ষড়যন্ত্র করে প্রাথমিকভাবে বিতর্কিত করেছে এবং ২০০৬ সালে বিবিধ পদক্ষেপের মাধ্যমে এক-এগারোর সৃষ্টি করে তিন মাসের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে দুই বছরের দীর্ঘ একটি অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। জনগণের এই তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণেই ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত নবম জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়নের নিমিত্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করে।
বিবৃতি দাতাদের মধ্যে রয়েছেন- বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার, সাবেক সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. হারুন-অর-রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী, সাবেক জেলা জজ এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য জেসমিন আরা বেগম, সাবেক আইজিপি ও রাষ্ট্রদূত ড. হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক, সাবেক আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ এবং ডিএমপির সাবেক কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া প্রমুখ।