অনলাইন ডেস্ক : নির্বাচনের আগে জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করতে হলে তরুণদের ভূমিকা রাখতে হবে উল্লেখ করে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে যদি আমরা জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করতে চাই তাহলে সহজ সমাধান হলো বিএনপি-জামায়াতকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করে দেন। সেটা যেহেতু সম্ভব নয়, তাই আরেকটা উপায় আছে। সেটা হলো- নৌকাকে ভোট দিন। জামায়াত-বিএনপির ভোটার যত কমতে থাকবে। আমাদের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস তত কমতে থাকবে। আপনারা যদি প্রতি নির্বাচনে নৌকাকে ভোট দেন, তাহলে এখন যেমন জামায়াত বলে কিছু নাই, ভবিষ্যতে বিএনপি বলেও কিছু থাকবে না। আর সেইদিন বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে।
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) রাতে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ‘লেটস টক’ অনুষ্ঠানের ৫১তম পর্বে তরুণদের মুখোমুখি হয়ে নিজের ভাবনা তুলে ধরার পাশাপাশি তরুণদের নানা জিজ্ঞাসার উত্তর দেন আওয়ামী লীগের গবেষণা শাখা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর প্রধান সজীব ওয়াজেদ।
অনুষ্ঠানে এক তরুণ জানতে চান, ‘প্রতি নির্বাচনের আগেই বাস-ট্রাকে আগুন জ্বালানো হচ্ছে। এটি কী বন্ধ হবে না? শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আমরা কবে পাবো?’ এর উত্তরে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘গত তিন নির্বাচনে পর্যালোচনা করে দেখেছি। এদেরকে এভাবে যানবাহনে আগুন দিতে একটি শ্রেণী উৎসাহ দিচ্ছে। বিদেশি বিশেষত ওয়েস্টার্ন কিছু রাষ্ট্রদূত। ঠিক নির্বাচনের আগে তারা অতিরিক্ত কথা বলা শুরু করে। এই যে জামায়াত একটি যুদ্ধাপরাধীদের দল, জঙ্গি দল। তাদেরকে জঙ্গি সন্ত্রাসী বলবে না। এক্ষেত্রে মানবাধিকারের কোন চিহ্ন নেই। বিএনপি আগুন জ্বালাচ্ছে, মানুষ পোড়াচ্ছে। কিন্তু বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল তারা বলবে না। উল্টো আরও স্পেস দিতে হবে, জায়গা দিতে হবে- আরও মানুষ পোড়াও, আরও মানুষ মারো। আমি তরুণদের বলবো, তারা যেন বিদেশিদের থেকে সাবধান থাকে। তারা চায় বাংলাদেশ যেন গরীব দেশ হয়ে থাকে। তাদের হুকুম মতো চলে।’
১৯৭৫ সালে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হারিয়েছেন সজীব ওয়াজেদ। তার মা ও খালা ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান এই হত্যাযজ্ঞ থেকে। লেটস টক অনুষ্ঠানে বেশ ক্ষোভ নিয়ে এক তরুণ জানান, ১৯৭৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিনা বিচারে গণফাঁসি দিয়ে তার চাচা এক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে। এর বিচার কি কখনও পাওয়া যাবে না? প্রতি উত্তরে দুঃখ প্রকাশ করে সজীব ওয়াজেদ বলেন, এটা জিয়াউর রহমানের আমল আমাদের দেশের বিরাট একটা কালো দাগ ছিল। আজকে যারা মানবাধিকারের কথা বলে, তারা এটা বলে না জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি তখন কত হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে বিচার ছাড়া। তাদের লাশ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি আজ পর্যন্ত। এই হলো বিএনপি। এটা কী গণতান্ত্রিক দল? না, এটা একটা সন্ত্রাসী দল। এটা একটি খুনিদের দল। জিয়াউর রহমান স্বৈরাচার ছিলো, জিয়াউর রহমান খুনি ছিল। আমরা বিচার করার চেষ্টা করছি। এটা একটা কঠিন বিষয়। তখন থেকে অনেক রেকর্ডস নেই। তারা তো সব মুছে ফেলেছে। যেভাবেই হোক আমরা তাদের বিচার করার চেষ্টা করেই যাচ্ছি। এখন দেখেন বিএনপি জামায়াতের জঙ্গিবাদ আরও দুর্নীতির বিচার করতে গেলেও এখন বিদেশিরা বলছে মানবাধিকার লঙ্ঘন। তাদের বাঁচাতে ব্যস্ত বিদেশিরা।
আমি তরুণদেরকে বলবো, যারা বিএনপি-জামায়াতকে বাঁচাতে চেষ্টা করছে, তাদের কথা যখনই শুনবেন প্রতিবাদ করবেন। বলবেন, জিয়াউর রহমান খুনি ও বিএনপি জঙ্গিদল, তাদের পক্ষে কেন কথা বলছো তোমরা? তোমরা বিদেশিরা মানবাধিকারের কথা বলছো, তোমরা বিদেশিরা তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচার আগে করো। তখন তোমাদের কথায় বিশ্বাস করবো।
বর্তমানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও টলারেন্স লেভেল কমে যাচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আসার পর টলারেন্স লেভেল বাড়াতে পেরেছি। এর আগে রিলিজিয়াস টলারেন্স বলে কিছু ছিল না। বাংলাদেশ উল্টো পথে যাচ্ছিল। সেক্যুলারিজম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। মৌলবাদী দেশ হবার পথে হাঁটছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আওয়ামী লীগ সেক্যুলারিজমে বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে মৌলবাদী দেশে পরিণত হতে দেবে না। বাংলাদেশকে সেক্যুলার হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন ছিল জাতির পিতার। তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কেননা বিএনপি-জামায়াত আজকে যেই হামলা চালাচ্ছে। তারা বাংলাদেশকে সেক্যুলার দেশ হিসেবে দেখতে চায় না। তারা শান্তি চায় না। দেশকে তারা মৌলবাদী দেশের যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। আন্দোলনের নামে তারা সন্ত্রাস চালাচ্ছে সাধারণ মানুষের ওপর। বিশ্বের যে কোন দেশে একটি রাজনৈতিক দল এভাবে রাস্তায় সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারলে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা করে তাদের রাজনীতি বাতিল করে দেওয়া হতো। জামায়াতকে তো আমি কোন রাজনৈতিক দল মনে করি না। তারা যুদ্ধাপরাধীদের দল। জামায়াত হচ্ছে একটা সন্ত্রাসী ও জঙ্গি দল। কিন্তু এখন বিএনপিও সন্ত্রাসী ও জঙ্গি দলে পরিণত হয়েছে।’
দেশের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে তরুণদের সেতুবন্ধন গড়ে দিতে ২০১৪ সাল থেকে ইয়াং বাংলা ‘লেটস টক’ শিরোনামে এ আয়োজন করছে। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও আয়োজন করা হয় লেটস টক যেখানে দেশ নিয়ে তরুণদের ভাবনার কথা শোনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সঙ্গে তরুণদের নিয়ে তার ভাবনার কথাও জানান এই অনুষ্ঠানে।