সিনিয়র রিপোর্টার : দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে বাদ পড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেতে ইসিতে আপিল আবেদন শুরু করেছেন। আজ থেকে শুরু হওয়া এই আপিল আবেদন চলবে আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বুধবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের সামনে অস্থায়ী ক্যাম্পে এই আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছে। ১০-১৫ ডিসেম্বর আপিল শুনানির মাধ্যমে রায় ঘোষণা করা হবে।
গত সোমবার যাচাই-বাছাই শেষে ৭৩১ জনের মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করে ইসি। এরপর নির্বাচন উপলক্ষে আপিল দায়ের, শুনানি ও নিষ্পত্তি সংক্রান্ত নোটিশ জারি করেছে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি।
ইসি সচিবালয়ের আইন শাখার উপ-সচিব মো. আব্দুছ সালাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা অনুযায়ী মনোনয়নপত্র বাতিল ও গ্রহণ আদেশের বিরুদ্ধে কোনো প্রার্থী, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান রিটার্নিং অফিসারের আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পরবর্তী পাঁচদিনের মধ্যে অর্থাৎ ৫-৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল চারটার মধ্যে ইসি বরাবর স্মারকলিপি আকারে (আপিলের মূল কাগজপত্র ১ সেট ও ছায়ালিপি ৬ সেটসহ) দায়ের করতে পারবেন।
এ জন্য নির্বাচন ভবনে দেশের ১০ অঞ্চলের জন্য ১০ বুথ করা হয়েছে। সেখানে নিয়োজিত ১০ কর্মকর্তার কাছে আপিল আবেদন জমা দিতে হবে। ১০-১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন ১০০ করে আপিল আবেদন ক্রমানুসারে নিষ্পত্তি করা হবে। আপিল আবেদনের শুনানি শেষে ফলাফল মনিটরে দেখা যাবে। আপিলের পর রায়ের পিডিএফ কপি ও আপিলের সিদ্ধান্ত রিটার্নিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষের ই-মেইলে পাঠানো হবে ও ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। এছাড়া আপিল রায়ের অনুলিপি শিডিউল অনুযায়ী (নির্ধারিত সময়সীমা) নির্বাচন ভবনের অভ্যর্থনা ডেস্ক থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। রায়ের অনুলিপি প্রাপ্তির আবেদনের ভিত্তিতে বিতরণ করা হবে (উল্লেখ্য, নামঞ্জুর আপিলের রায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া হবে)।
উল্লেখ্য, আসন্ন নির্বাচনে অংশ নিতে ২৯ দল ও স্বতন্ত্র মিলে প্রায় পৌনে ৩ হাজার প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিল। বাছাইয়ে ১ হাজার ৯৮৫ প্রার্থী বৈধ ও ৭৩১ প্রার্থীকে অবৈধ ঘোষণা করে ইসি। ইসি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫-১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল আটটা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।
কোন আসনের প্রার্থীরা কোথায় আপিল করবেন :
৩০০ আসনের মধ্যে ১ (পঞ্চগড়-১) থেকে ৩৩ (গাইবান্ধা-৫) পর্যন্ত আসনের প্রার্থীরা বুথ-১ রংপুর অঞ্চলে আপিল করবেন। জেলাগুলো হলো- পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা।
রাজশাহী অঞ্চলের অর্থাৎ ৩৪ নম্বর (জয়পুরহাট-১) থেকে ৭২ নম্বর (পাবনা-৫) পর্যন্ত আসনের প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন ২ নম্বর বুথে। জেলাগুলো হলো- জয়পুরহাট, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা।
খুলনা অঞ্চলের প্রার্থীদের আপিলের জন্য থাকছে বুথ-৩। এ অঞ্চলে রয়েছে সংসদের ৭৩ নম্বর (মেহেরপুর-১) থেকে ১০৮ নম্বর (সাতক্ষীরা-৪) আসনের প্রার্থীরা। জেলাগুলো হলো- মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, মাগুরা, নড়াইল, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা।
বরিশাল অঞ্চলের প্রার্থীদের আপিলের জন্য থাকছে বুথ-৪। এ অঞ্চলে রয়েছে সংসদের ১০৯ নম্বর (বরগুনা-১) থেকে ১২৯ নম্বর (পিরোজপুর-৩) আসন। জেলাগুলো হলো- বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর।
ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রার্থীদের আপিলের জন্য থাকছে বুথ-৫। এ অঞ্চলের প্রার্থীরা সংসদের ১৩০ নম্বর (টাঙ্গাইল-১) থেকে ১৬৭ নম্বর (কিশোরগঞ্জ-৬) আসনের প্রার্থীরা। এ অঞ্চলের জেলাগুলো হলো- টাঙ্গাইল, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ।
ঢাকা অঞ্চলের প্রার্থীদের আপিলের জন্য থাকছে বুথ-৬। এই অঞ্চলে থাকছে সংসদের ১৬৮ নম্বর (মানিকগঞ্জ-১) থেকে ২০৮ নম্বর (নারায়ণগঞ্জ-৫) আসনের প্রার্থীরা। জেলাগুলো হলো- মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ।
ফরিদপুর অঞ্চলের প্রার্থীদের আপিলের জন্য থাকছে বুথ-৭। এই বুথে আপিল করতে পারবেন সংসদের ২০৯ নম্বর (রাজবাড়ী-১) থেকে ২২৩ নম্বর (শরীয়তপুর-৩) আসনের প্রার্থীরা। জেলাগুলো হলো- রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর।
সিলেট অঞ্চলের প্রার্থীদের আপিলের জন্য থাকছে বুথ-৮। এ অঞ্চলে রয়েছেন জাতীয় সংসদের ২২৪ নম্বর (সুনামগঞ্জ-১) থেকে ২৪২ নম্বর (হবিগঞ্জ-৪) আসনের প্রার্থীরা। এ অঞ্চলের জেলাগুলো হলো- সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলবীবাজার ও হবিগঞ্জ।
কুমিল্লা অঞ্চলের প্রার্থীদের আপিলের জন্য থাকছে বুথ-৯। এ অঞ্চলটিতে থাকছে সংসদের ২৪৩ নম্বর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১) থেকে শুরু করে ২৭৭ নম্বর (লক্ষ্মীপুর-৪) পর্যন্ত আসন। এই বুথে আবেদনকারী জেলাগুলো হলো- ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রার্থীদের আপিলের জন্য থাকছে বুথ-১০। এ অঞ্চলের সংসদীয় আসনগুলো হলো ২৭৮ নম্বর (চট্টগ্রাম-১) থেকে ৩০০ নম্বর (বান্দরবান) পর্যন্ত। এ অঞ্চলের জেলাগুলো হলো- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান।