সিনিয়র রিপোর্টার : আজ ২০ জানুয়ারি, শহীদ আসাদ দিবস। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ১৯৬৯ সালের এদিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ছাত্রনেতা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। আহত হন আরও অনেক। শহীদ আসাদের এই আত্মত্যাগ- চলমান আন্দোলনকে বেগবান করে। পরবর্তীকালে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন হয় স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের। সেই থেকে দিনটি শহীদ আসাদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। পৃথক বাণীতে শহীদ আসাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান তারা। দিবসটি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক , সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে শহীদ আসাদ একটি অমর নাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদের আত্মত্যাগ ৬৯ এর আন্দোলনকে বেগবান করে। জেল-জুলুম উপেক্ষা করে স্বাধিকারের দাবিতে সোচ্চার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ রাজপথে নেমে আসে। পর্যায়ক্রমে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয় এবং গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। স্বৈরশাসক আইয়ুব ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন, পতন হয় স্বৈরশাসনের। আজকের এদিনে আমি শহিদ আসাদকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।’
তিনি বলেন, ‘এ গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ও নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহিদ আসাদের আত্মত্যাগ আমাদের মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি অনন্য মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে এবং দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রপতি শহিদ আসাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ ২০ জানুয়ারি শহিদ আসাদ দিবস। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে আত্মত্যাগকারী শহিদ আসাদ এ দেশের গণতন্ত্রপ্রেমী, মুক্তিকামী মানুষের মধ্যে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার আত্মত্যাগ সবসময় আমাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে প্রেরণা যোগাবে। এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা আত্মাহুতি দিয়েছেন তাদের অবদান আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। আমি মনে করি, শহিদের আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যাবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্যমূলক আচরণ, নির্যাতন এবং দমন-পীড়নে বাংলার মানুষ যখন দিশাহারা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ছয় দফা তখন বাঙালির মুক্তির দিশারি হিসেবে আবির্ভূত হয়। ছয় দফা হয়ে ওঠে বাঙালির প্রাণের দাবি। ছয় দফার পক্ষে প্রবল জনমতের জোয়ার দেখে আতঙ্কিত সামরিক জান্তা আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা দায়ের করে, যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে সমধিক পরিচিত। বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষিত ছয় দফা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পরিণত হন নিপীড়িত ও নির্যাতিত বাঙালির মুক্তির মূর্ত প্রতীকে।
কারাগারে আটক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে গর্জে উঠে সারা বাংলার মানুষ। পর্যায়ক্রমে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করে। জনতার কঠিন রুদ্ররোষ ও গণআন্দোলনের চাপের মুখে পাকিস্তানি স্বৈরসরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পতন হয় স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের। প্রধানমন্ত্রী শহিদ আসাদসহ বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে আত্মোত্সর্গকারী সব শহিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।