ঢাকা , সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন : সরকারি কর্মচারী আইন প্রণয়নসহ বেশ কিছু নীতিমালা প্রণীত হয়েছে

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৮:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৪
  • 145
অনলাইন ডেস্ক  : কর্মকর্তাদের উপযুক্ত স্থলে পদায়ন করতে না পারার ঘটনায় প্রশাসনের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। এই বাস্তবতায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদসংখ্যা নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী পদোন্নতি প্রদান এবং পদায়ন করার সুযোগ তৈরি এই সংস্কারের মূল লক্ষ্য। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ক্রমাগতভাবে মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর অধিদপ্তর, সংস্থা ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রয়োজনীয়তা নিরিখে বাড়ানো হয়েছে। সে অনুযায়ী জনবলও বেড়েছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের বর্ধিত জনবলের নির্ধারিত পদসংখ্যা বাড়ানো হয়নি বা অর্গানোগ্রাম করা হয়নি।
ফলে পদের অতিরিক্ত সংখ্যার পদোন্নতি এবং পদোন্নতিপ্রাপ্তদের যথাযথ পদায়ন সম্ভব হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পদোন্নতি পাবার পরও দেখা যায় পদোন্নতিপূর্ব পদে (ইনসিটু) পদায়ন করা হয়। জনপ্রশাসনের বাইরেও পুলিশ প্রশাসনসহ একাধিক সংস্থায় একই পরিস্থিতি বিরাজমান। সর্বশেষ পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ১২ জন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদে পদোন্নতি দেওয়া হলেও তারা এখনো পূর্বপদে বহাল আছেন। আর জনপ্রশাসনে উপসচিবের পদে কাজ করছেন যুগ্মসচিব আর যুগ্মসচিবের পদে কাজ করছেন অতিরিক্ত সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিবের পদে কাজ করছেন উপসচিব।
আর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গতকাল মঙ্গলবারের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মিলিয়ে অতিরিক্ত সচিবের অনুমোদিত পদ আছে ১৪০টি। এই পদে কর্মরত আছেন ৩২২ জন কর্মকর্তা। যুগ্ম-সচিবের অনুমোদিত পদ ৩৩২টি। কর্মরত আছেন ৯১৯ জন। উপসচিব পদে অনুমোদিত পদ ১ হাজার ৪২৮টি। কর্মরত আছেন ১ হাজার ৭১১ জন। ইতিমধ্যে যোগ্যতা অর্জন করায় ১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গতকাল সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের সভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উপসচিব এবং যুগ্ম-সচিব পদেও পদোন্নতি দেওয়া হবে।
প্রশাসনের সাংগঠনিক কাঠামোতে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারি উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর অধিদপ্তর, সংস্থা ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামোয় আমূল সংস্কার আনা হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবার এই কাজ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কোন প্রতিষ্ঠানে কোন পদের বিপরীতে কতজন কোন মর্যাদার কর্মকর্তা প্রয়োজন তা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ঠিক করে দেবে। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি পূর্ণাঙ্গ সাংগঠনিক কাঠামো নিরূপণ করবে। তার ভিত্তিতেই নিয়োগ পদোন্নতি পদায়ন হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন থেকেই সাংগঠনিক কাঠামোতে কোনো সংস্কার আনা যায়নি। কিন্তু এবার এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
প্রসংগত, এ সরকারের আমলে সরকারি কর্মচারী আইন প্রণয়নসহ বেশ কিছু নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। তবে সাংগঠনিক কাঠামোর বিষয়টি এতদিন উপেক্ষিতই ছিল। কার্যত এডহক ভিত্তিতে পদোন্নতি পদায়নের বিষয়টি চলে আসছে। মন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা বা খসড়া কাঠামো পাওয়া গেলে সমন্বিত কাঠামো পূর্ণাঙ্গ করা হবে। তিনি বলেন, সাধারণত যখন কোনো পদোন্নতি দেওয়া হয় তখন খেয়াল রাখা হয় পরবর্তী দুই মাসে আরো কতপদ শূন্য হবে, সেই সংখ্যা ধরে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ফলে তাৎক্ষণিক এই ধারণা করা হয় যে, পদের অতিরিক্ত সংখ্যায় পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। সরকারের ৫ লাখ শূন্য পদ কেন পূরণ করা যাচ্ছে না, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পদের বিপরীতে নিয়োগ বা পদায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। নিয়োগও চলে আবার অবসরজনিত কারণে পদ শূন্যও হয়। ফলে সব সময়ই কিছু না কিছু পদ শূন্য থাকে।
প্রশাসনিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে সব মন্ত্রণালয়ের অর্গানোগ্রাম হালনাগাদ করার প্রয়াস একটি জরুরি প্রয়াস। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে টানা চার দফায় ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনিক সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছেন। বহির্বিশ্বের আমলাতন্ত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম ঔপনিবেশিক মানসিকতামুক্ত, দক্ষ, মেধাসম্পন্ন ও সৃজনশীল জনপ্রশাসন গড়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পাকিস্তান আমলের ২৪ বছরে এবং বাংলাদেশ আমলেও ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ আমলে তৈরি প্রশাসনিক ব্যবস্থার মূল কাঠামো ও কার্যপ্রণালিতে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। অন্যদিকে, স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো প্রশাসন ব্যবস্থার বাস্তবায়ন হয়নি। বিভিন্ন সময় প্রশাসনের সংস্কারের জন্য বিভিন্ন কমিটি বা কমিশন গঠন করা হলেও এসব কমিশন বা কমিটির সুপারিশ খুব অল্পই আমলে নেওয়া হয়েছে। ১৯৮৩ সালে সামরিক শাসনামলের বহুল আলোচিত ‘এনাম কমিটির’ সুপারিশ ও ১৯৯৬ সালের গঠিত শামসুল আলম কমিশনের সুপারিশও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।
এদিকে, প্রশাসনিক সংস্কারের বিষয়ে আশাবাদী হলেও বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন যে, এই সংস্কার যেন সামগ্রিক হয় সেটি নিশ্চিত করার প্রতি জোর দিয়েছেন ক্যাডার কর্মকর্তারা। বিশেষজ্ঞদের মতে, একুশ শতকের বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং আগামীর চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পৃথিবীর উপযোগী জনপ্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েই এখন প্রশাসনিক সংস্কার করতে হবে। এজন্য বিদ্যমান বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং অধীনস্থ দপ্তর ও সংস্থাগুলোর কাজ এবং ক্যাডার সার্ভিসগুলোরও পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। জাতীয় ও স্থানীয় মাঠপর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই একই ধরনের কাজে নিয়োজিত কিছু দপ্তর ও বিভাগের বিলুপ্তি বা একত্রীকরণ প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য সরকারি চাকরি আইনেরও যুগোপযোগী সংস্কার করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি খাত এবং বেসরকারি খাতের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকেও প্রশাসনিক সংস্কারে আমলে নিতে হবে।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন : সরকারি কর্মচারী আইন প্রণয়নসহ বেশ কিছু নীতিমালা প্রণীত হয়েছে

আপডেট সময় ০৮:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৪
অনলাইন ডেস্ক  : কর্মকর্তাদের উপযুক্ত স্থলে পদায়ন করতে না পারার ঘটনায় প্রশাসনের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। এই বাস্তবতায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়ভিত্তিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদসংখ্যা নির্ধারণ এবং সে অনুযায়ী পদোন্নতি প্রদান এবং পদায়ন করার সুযোগ তৈরি এই সংস্কারের মূল লক্ষ্য। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ক্রমাগতভাবে মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর অধিদপ্তর, সংস্থা ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রয়োজনীয়তা নিরিখে বাড়ানো হয়েছে। সে অনুযায়ী জনবলও বেড়েছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের বর্ধিত জনবলের নির্ধারিত পদসংখ্যা বাড়ানো হয়নি বা অর্গানোগ্রাম করা হয়নি।
ফলে পদের অতিরিক্ত সংখ্যার পদোন্নতি এবং পদোন্নতিপ্রাপ্তদের যথাযথ পদায়ন সম্ভব হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পদোন্নতি পাবার পরও দেখা যায় পদোন্নতিপূর্ব পদে (ইনসিটু) পদায়ন করা হয়। জনপ্রশাসনের বাইরেও পুলিশ প্রশাসনসহ একাধিক সংস্থায় একই পরিস্থিতি বিরাজমান। সর্বশেষ পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ১২ জন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদে পদোন্নতি দেওয়া হলেও তারা এখনো পূর্বপদে বহাল আছেন। আর জনপ্রশাসনে উপসচিবের পদে কাজ করছেন যুগ্মসচিব আর যুগ্মসচিবের পদে কাজ করছেন অতিরিক্ত সচিব, সিনিয়র সহকারী সচিবের পদে কাজ করছেন উপসচিব।
আর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গতকাল মঙ্গলবারের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মিলিয়ে অতিরিক্ত সচিবের অনুমোদিত পদ আছে ১৪০টি। এই পদে কর্মরত আছেন ৩২২ জন কর্মকর্তা। যুগ্ম-সচিবের অনুমোদিত পদ ৩৩২টি। কর্মরত আছেন ৯১৯ জন। উপসচিব পদে অনুমোদিত পদ ১ হাজার ৪২৮টি। কর্মরত আছেন ১ হাজার ৭১১ জন। ইতিমধ্যে যোগ্যতা অর্জন করায় ১৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গতকাল সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের সভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উপসচিব এবং যুগ্ম-সচিব পদেও পদোন্নতি দেওয়া হবে।
প্রশাসনের সাংগঠনিক কাঠামোতে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারি উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর অধিদপ্তর, সংস্থা ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামোয় আমূল সংস্কার আনা হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবার এই কাজ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কোন প্রতিষ্ঠানে কোন পদের বিপরীতে কতজন কোন মর্যাদার কর্মকর্তা প্রয়োজন তা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ঠিক করে দেবে। পরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি পূর্ণাঙ্গ সাংগঠনিক কাঠামো নিরূপণ করবে। তার ভিত্তিতেই নিয়োগ পদোন্নতি পদায়ন হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন থেকেই সাংগঠনিক কাঠামোতে কোনো সংস্কার আনা যায়নি। কিন্তু এবার এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
প্রসংগত, এ সরকারের আমলে সরকারি কর্মচারী আইন প্রণয়নসহ বেশ কিছু নীতিমালা প্রণীত হয়েছে। তবে সাংগঠনিক কাঠামোর বিষয়টি এতদিন উপেক্ষিতই ছিল। কার্যত এডহক ভিত্তিতে পদোন্নতি পদায়নের বিষয়টি চলে আসছে। মন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা বা খসড়া কাঠামো পাওয়া গেলে সমন্বিত কাঠামো পূর্ণাঙ্গ করা হবে। তিনি বলেন, সাধারণত যখন কোনো পদোন্নতি দেওয়া হয় তখন খেয়াল রাখা হয় পরবর্তী দুই মাসে আরো কতপদ শূন্য হবে, সেই সংখ্যা ধরে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ফলে তাৎক্ষণিক এই ধারণা করা হয় যে, পদের অতিরিক্ত সংখ্যায় পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। সরকারের ৫ লাখ শূন্য পদ কেন পূরণ করা যাচ্ছে না, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পদের বিপরীতে নিয়োগ বা পদায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। নিয়োগও চলে আবার অবসরজনিত কারণে পদ শূন্যও হয়। ফলে সব সময়ই কিছু না কিছু পদ শূন্য থাকে।
প্রশাসনিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে সব মন্ত্রণালয়ের অর্গানোগ্রাম হালনাগাদ করার প্রয়াস একটি জরুরি প্রয়াস। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে টানা চার দফায় ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনিক সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছেন। বহির্বিশ্বের আমলাতন্ত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম ঔপনিবেশিক মানসিকতামুক্ত, দক্ষ, মেধাসম্পন্ন ও সৃজনশীল জনপ্রশাসন গড়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পাকিস্তান আমলের ২৪ বছরে এবং বাংলাদেশ আমলেও ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ আমলে তৈরি প্রশাসনিক ব্যবস্থার মূল কাঠামো ও কার্যপ্রণালিতে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। অন্যদিকে, স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো প্রশাসন ব্যবস্থার বাস্তবায়ন হয়নি। বিভিন্ন সময় প্রশাসনের সংস্কারের জন্য বিভিন্ন কমিটি বা কমিশন গঠন করা হলেও এসব কমিশন বা কমিটির সুপারিশ খুব অল্পই আমলে নেওয়া হয়েছে। ১৯৮৩ সালে সামরিক শাসনামলের বহুল আলোচিত ‘এনাম কমিটির’ সুপারিশ ও ১৯৯৬ সালের গঠিত শামসুল আলম কমিশনের সুপারিশও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।
এদিকে, প্রশাসনিক সংস্কারের বিষয়ে আশাবাদী হলেও বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন যে, এই সংস্কার যেন সামগ্রিক হয় সেটি নিশ্চিত করার প্রতি জোর দিয়েছেন ক্যাডার কর্মকর্তারা। বিশেষজ্ঞদের মতে, একুশ শতকের বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং আগামীর চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পৃথিবীর উপযোগী জনপ্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েই এখন প্রশাসনিক সংস্কার করতে হবে। এজন্য বিদ্যমান বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং অধীনস্থ দপ্তর ও সংস্থাগুলোর কাজ এবং ক্যাডার সার্ভিসগুলোরও পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। জাতীয় ও স্থানীয় মাঠপর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই একই ধরনের কাজে নিয়োজিত কিছু দপ্তর ও বিভাগের বিলুপ্তি বা একত্রীকরণ প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জন্য সরকারি চাকরি আইনেরও যুগোপযোগী সংস্কার করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি খাত এবং বেসরকারি খাতের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকেও প্রশাসনিক সংস্কারে আমলে নিতে হবে।