ঢাকা , রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অ্যাগ্রো অর্গানিকার শেয়ার জালিয়াতি : ইউনুসুরকে আইনের আওতায় আনার পরামর্শ

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৩
  • 123

পুঁজিবাজারনিউজ প্রতিবেদক:

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আরেকটি স্বজনপ্রীতির সাক্ষর রাখল অ্যাগ্রো অর্গানিকায়। ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠান শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের প্রধান পরামর্শক মোহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে বিএসইসির উপরি মহলের যে সক্ষ্যতা আছে, তারই প্রমাণ পাওয়া গেলো অ্যাগ্রো অর্গানিকার অর্থ উত্তোলনের সুযোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে। যে অপরাধে বিএসইসি বানকো ফাইন্যান্সের এমডিসহ তার পরিবারের লোকজনকে ২৬ কোটি টাকা জরিমানা করেছে, সেই বিএসইসি মোহাম্মদ ইউনুসের সম্পৃক্ততার অ্যাগ্রো অর্গানিকাকে শাস্তির পরিবর্তে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদনের মাধ্যমে পুরুস্কৃত করেছে।

বিএসইসির এমন দ্বিমূখী আচরন শেয়ারবাজারে খারাপ ছাড়া ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে না বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। শেয়ারবাজার একটি অতি সংবেদনশীল জায়গা হিসেবে বিএসইসির অনেক সাবধান থাকতে হবে। এখানে ব্যক্তিগত সর্ম্পক্যের কারনে কোন সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। এ ধরনের ম্যাসেজ বাজারে ছড়িয়ে পড়লে, কমিশনের উপর থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা উঠে যাবে।

২০১৫ সালের পাবলিক ইস্যু রুলসের ৩(২)(ডি)-তে বলা হয়, ইস্যু ম্যানেজার ইস্যুয়ারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারবে না এবং শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। একই কথা বলা আছে কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর রুলসের ৮ এর ৩-এতেও। কিন্তু পাবলিক ইস্যু রুলস ওই ধারা ভঙ্গের দায়েবানকো ফাইন্যান্সের এমডিও তার পরিবারকে করা হয়েছে রেকর্ড জরিমানা। আর ইউনুসের অ্যাগ্রো অর্গানিকাকে করা হয়েছে পুরুস্কৃত।

এক শীর্ষ মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) বলেন, বর্তমান কমিশন আরও আগেই ব্যক্তিগত সর্ম্পক্যকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। যে কারনে তারা একই ধরনের কাজের জন্য কাউকে শাস্তি, আবার কাউকে পুরুস্কৃত করছে। কমিশনের এমন আচরন শেয়ারবাজার প্রতিষ্ঠার পরে এর আগে কখনো দেখা গেছে বলে মনে পড়ছে না। এই ধারা থেকে কমিশন বেরিয়ে আসতে না পারলে, শেয়ারবাজারের উন্নয়ন কখনোই সম্ভব না।

২০১৫ সালের পাবলিক ইস্যু রুলসের অধীনে বিবিএস কেবলস ও নাহি অ্যালুমিনিয়াম শেয়ারবাজারে আসে। যার ইস্যু ম্যানেজার ছিল বানকো ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। প্রতিষ্ঠানটির এমডির আত্মীয় স্বজন আইপিওকালীন বিবিএস কেবলস ও নাহি অ্যালুমিনিয়ামের শেয়ার ধারন করায়, ২০১৫ সালের পাবলিক ইস্যু রুলসের ৩(২)(ডি) ধারা ভঙ্গ হয়েছে বলে বিএসইসি সাব্যস্ত করে এবং তাকে ও তার পরিবারকে কোটি কোটি টাকা জরিমানা ও চাকরীচ্যুত করে।

কিন্তু মোহাম্মদ ইউনুসের শাহজালাল ইক্যুইটি অ্যাগ্রো অর্গানিকার ইস্যু ব্যবস্থাপনার কাজ করছে এবং ইউনুসের মালিকানাধীন ইউনুস পেপার মিলস অর্গানিকার ৩ লাখ ৬০ হাজার শেয়ার ধারন করা সত্ত্বেও অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন পেয়েছে। জরিমানা তো পরের কথা। মোহাম্মদ ইউনুস শাহজালাল ইক্যুইটির প্রধান উপদেষ্টা এবং ইউনুস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। যে গ্রুপের কোম্পানি ইউনুস পেপার মিলস।

তবে কিউআইও অনুমোদনের পরে সম্প্রতি ইউনুস পেপার মিলসের শেয়ার অন্যের কাছে দেখিয়েছে। অ্যাগ্রো অর্গানিকার কিউআইও অনুমোদনের পরে অর্থ বাণিজ্য কোম্পানিটির প্রসপেক্টাস সংগ্রহ করে (সব প্রমাণ রয়েছে)। সেখানে শেয়ারহোল্ডার হিসেবে ইউনুস পেপার মিলসের নাম পাওয়া যায়। কিন্তু কিআইও বাতিল এড়াতে কোম্পানিটির মালিকানা থেকে সম্প্রতি ইউনুস পেপার মিলসের নাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এ করতে গিয়ে আবার তারা কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর রুলস ভঙ্গ করেছে।

কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর রুলস ৩ এর (ই)-তে বলা হয়েছে, আর্থিক হিসাব নিরীক্ষার পরে (যা প্রসপেক্টাসে যুক্ত করা হয়) পরিশোধিত মূলধনসহ কোন ম্যাটেরিয়াল পরিবর্তন করা যাবে না।

কিন্তু অ্যাগ্রো অর্গানিকায় প্রসপেক্টাসে ৪৫ পৃষ্টায় ১০৮ নম্বর সিরিয়ালের শেয়ারহোল্ডার বা মালিকানায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। কোম্পানিটির কিউআইও অনুমোদন দেওযার পরে সম্প্রতি ৩ লাখ ৬০ হাজার শেয়ারধারী ইউনুস পেপার মিলসের পরিবর্তন এসেছে। তার জায়গায় নতুন শেয়ারহোল্ডার হিসেবে বেঙ্গল অ্যাসেট হোল্ডিংসকে দেখানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে অ্যাগ্রো অর্গানিকার প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ শরীফুল ইসলামের ব্যক্তিগত ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়া তার হোয়াটসঅ্যাপে লিখিত দিয়েও কোন প্রতিউত্তর পাওয়া যায়নি।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

অ্যাগ্রো অর্গানিকার শেয়ার জালিয়াতি : ইউনুসুরকে আইনের আওতায় আনার পরামর্শ

আপডেট সময় ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৩

পুঁজিবাজারনিউজ প্রতিবেদক:

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আরেকটি স্বজনপ্রীতির সাক্ষর রাখল অ্যাগ্রো অর্গানিকায়। ইস্যু ম্যানেজার প্রতিষ্ঠান শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের প্রধান পরামর্শক মোহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে বিএসইসির উপরি মহলের যে সক্ষ্যতা আছে, তারই প্রমাণ পাওয়া গেলো অ্যাগ্রো অর্গানিকার অর্থ উত্তোলনের সুযোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে। যে অপরাধে বিএসইসি বানকো ফাইন্যান্সের এমডিসহ তার পরিবারের লোকজনকে ২৬ কোটি টাকা জরিমানা করেছে, সেই বিএসইসি মোহাম্মদ ইউনুসের সম্পৃক্ততার অ্যাগ্রো অর্গানিকাকে শাস্তির পরিবর্তে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদনের মাধ্যমে পুরুস্কৃত করেছে।

বিএসইসির এমন দ্বিমূখী আচরন শেয়ারবাজারে খারাপ ছাড়া ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে না বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। শেয়ারবাজার একটি অতি সংবেদনশীল জায়গা হিসেবে বিএসইসির অনেক সাবধান থাকতে হবে। এখানে ব্যক্তিগত সর্ম্পক্যের কারনে কোন সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। এ ধরনের ম্যাসেজ বাজারে ছড়িয়ে পড়লে, কমিশনের উপর থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা উঠে যাবে।

২০১৫ সালের পাবলিক ইস্যু রুলসের ৩(২)(ডি)-তে বলা হয়, ইস্যু ম্যানেজার ইস্যুয়ারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারবে না এবং শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। একই কথা বলা আছে কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর রুলসের ৮ এর ৩-এতেও। কিন্তু পাবলিক ইস্যু রুলস ওই ধারা ভঙ্গের দায়েবানকো ফাইন্যান্সের এমডিও তার পরিবারকে করা হয়েছে রেকর্ড জরিমানা। আর ইউনুসের অ্যাগ্রো অর্গানিকাকে করা হয়েছে পুরুস্কৃত।

এক শীর্ষ মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) বলেন, বর্তমান কমিশন আরও আগেই ব্যক্তিগত সর্ম্পক্যকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। যে কারনে তারা একই ধরনের কাজের জন্য কাউকে শাস্তি, আবার কাউকে পুরুস্কৃত করছে। কমিশনের এমন আচরন শেয়ারবাজার প্রতিষ্ঠার পরে এর আগে কখনো দেখা গেছে বলে মনে পড়ছে না। এই ধারা থেকে কমিশন বেরিয়ে আসতে না পারলে, শেয়ারবাজারের উন্নয়ন কখনোই সম্ভব না।

২০১৫ সালের পাবলিক ইস্যু রুলসের অধীনে বিবিএস কেবলস ও নাহি অ্যালুমিনিয়াম শেয়ারবাজারে আসে। যার ইস্যু ম্যানেজার ছিল বানকো ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। প্রতিষ্ঠানটির এমডির আত্মীয় স্বজন আইপিওকালীন বিবিএস কেবলস ও নাহি অ্যালুমিনিয়ামের শেয়ার ধারন করায়, ২০১৫ সালের পাবলিক ইস্যু রুলসের ৩(২)(ডি) ধারা ভঙ্গ হয়েছে বলে বিএসইসি সাব্যস্ত করে এবং তাকে ও তার পরিবারকে কোটি কোটি টাকা জরিমানা ও চাকরীচ্যুত করে।

কিন্তু মোহাম্মদ ইউনুসের শাহজালাল ইক্যুইটি অ্যাগ্রো অর্গানিকার ইস্যু ব্যবস্থাপনার কাজ করছে এবং ইউনুসের মালিকানাধীন ইউনুস পেপার মিলস অর্গানিকার ৩ লাখ ৬০ হাজার শেয়ার ধারন করা সত্ত্বেও অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন পেয়েছে। জরিমানা তো পরের কথা। মোহাম্মদ ইউনুস শাহজালাল ইক্যুইটির প্রধান উপদেষ্টা এবং ইউনুস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। যে গ্রুপের কোম্পানি ইউনুস পেপার মিলস।

তবে কিউআইও অনুমোদনের পরে সম্প্রতি ইউনুস পেপার মিলসের শেয়ার অন্যের কাছে দেখিয়েছে। অ্যাগ্রো অর্গানিকার কিউআইও অনুমোদনের পরে অর্থ বাণিজ্য কোম্পানিটির প্রসপেক্টাস সংগ্রহ করে (সব প্রমাণ রয়েছে)। সেখানে শেয়ারহোল্ডার হিসেবে ইউনুস পেপার মিলসের নাম পাওয়া যায়। কিন্তু কিআইও বাতিল এড়াতে কোম্পানিটির মালিকানা থেকে সম্প্রতি ইউনুস পেপার মিলসের নাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এ করতে গিয়ে আবার তারা কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর রুলস ভঙ্গ করেছে।

কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর রুলস ৩ এর (ই)-তে বলা হয়েছে, আর্থিক হিসাব নিরীক্ষার পরে (যা প্রসপেক্টাসে যুক্ত করা হয়) পরিশোধিত মূলধনসহ কোন ম্যাটেরিয়াল পরিবর্তন করা যাবে না।

কিন্তু অ্যাগ্রো অর্গানিকায় প্রসপেক্টাসে ৪৫ পৃষ্টায় ১০৮ নম্বর সিরিয়ালের শেয়ারহোল্ডার বা মালিকানায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। কোম্পানিটির কিউআইও অনুমোদন দেওযার পরে সম্প্রতি ৩ লাখ ৬০ হাজার শেয়ারধারী ইউনুস পেপার মিলসের পরিবর্তন এসেছে। তার জায়গায় নতুন শেয়ারহোল্ডার হিসেবে বেঙ্গল অ্যাসেট হোল্ডিংসকে দেখানো হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে অ্যাগ্রো অর্গানিকার প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ শরীফুল ইসলামের ব্যক্তিগত ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়া তার হোয়াটসঅ্যাপে লিখিত দিয়েও কোন প্রতিউত্তর পাওয়া যায়নি।