ঢাকা , রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৌন্দর্য কাছে টানে, ছোঁয়াতেই মৃত্যু

  • ডেস্ক :
  • আপডেট সময় ০৩:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০২৩
  • 144

আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে নানা ধরনের বিষাক্ত প্রাণী ও পতঙ্গ। যেগুলোর কামড়ে রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং এর ফলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। বিষাক্ত পতঙ্গ বা প্রাণীর কথা শুনলে প্রথমেই মাথায় আসে সাপ, বিচ্ছু কিংবা বিষাক্ত মাকড়সার কথা। কিন্তু জানেন কি? বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত প্রাণীর তালিকায় রয়েছে আপনার পরিচিত এমন ছোট একটি প্রাণী; যার শরীরে এতটাই বিষ যে, তা দিয়ে অনায়াসেই মেরে ফেলা যাবে দশজন তরতাজা মানুষ! দুই ইঞ্চির ছোট একটা পেপার ক্লিপের আকারের প্রাণীটা হলো ব্যাঙ! যার কিতাবি নাম ‘গোল্ডেন পয়জন ডার্ট ফ্রগ’ বা ‘গোল্ডেন পয়জন ফ্রগ’।

‘গোল্ডেন পয়জন ডার্ট ফ্রগ’ ব্যাঙটি প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯৭৩ সালে এবং বৈজ্ঞানিক অন্তর্ভুক্তিতে আসে ১৯৭৮ সালে। বৃহত্তম প্রজাতির পয়জন ফ্রগের মধ্যে ‘গোল্ডেন পয়জন ডার্ট ফ্রগ’ অন্যতম। কলোম্বিয়ার রেইন ফরেস্টের চোকো ও এম্বেরা আদিবাসীরা তাদের শিকারের ‘ডার্ট’ তথা ছোট আকারের বিশেষ তীর বা বাণ বিষাক্ত করার জন্য এই ব্যাঙের বিষ ব্যবহার করে। এমনকি এই বিষ যুদ্ধেও ব্যবহৃত হত বলে ধারণা করা হয়। জীবন্ত ব্যাঙের পিঠে ডার্টের ডগা ঘষলেই সেখানে বিষ লেগে যায় এবং সে বিষ শুকিয়ে গেলে পরবর্তী এক বছর পর্যন্ত ডার্টে সক্রিয় থাকে। একটি ব্যাঙ দুই বা তিনটি ডার্টের জন্য যথেষ্ট বিষ সরবরাহ করে থাকে। বিষ সংগ্রহের পর ব্যাঙটিকে অক্ষত অবস্থায় বনে ছেড়ে দেওয়া হয়। আদিবাসীরা সাধারণত স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখি শিকারে এই ডার্ট ব্যবহার করে থাকে। আদিবাসীদের এভাবে এই ব্যাঙ ব্যবহারের ফলে এর নাম হয়েছে ‘গোল্ডেন পয়জন ডার্ট ফ্রগ’।

গোল্ডেন পয়জন ডার্ট ফ্রগ বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে; যেমন, সোনালি-কমলা, সোনালি-হলুদ বা ফ্যাকাশে সবুজ। বাচ্চা গোল্ডেন পয়জন ডার্ট ফ্রগ কালো রঙের হয় এবং পিঠের দিকে থাকে সোনালি ডোরাকাটা। এই জাতের প্রাপ্তবয়স্ক ব্যাঙের আকার ৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

এরা সাধারণত ভূমিতে বসবাস করে এবং স্ত্রী ব্যাঙ মাটিতেই ডিম পাড়ে। পরে পুরুষ ব্যাঙ ব্যাঙ্গাচিগুলোকে পিঠে বহন করে স্থায়ী জলাশয়ে নিয়ে যায়। এদের খাদ্যের মধ্যে রয়েছে মাছি, বিটোল, পিঁপড়া, উইপোকা ইত্যাদি অমেরুদণ্ডী প্রাণী। একটি গোল্ডেন পয়জন ডার্ট ফ্রগ সাধারণত ৬ থেকে ১০ বছর বাঁচে।

এই ব্যাঙের ভয়ংকর বৈশিষ্ট্য হলো, মানুষের প্রাণনাশের জন্য একে সাপ বা মাকড়সার মতো কামড় বসাতে হয় না; বরং এই ব্যাঙকে ছুঁলেই ঘটে যেতে পারে মৃত্যু। ‘গোল্ডেন পয়জন ডার্ট ফ্রগ’ তাদের ত্বকের গ্রন্থিতেই বিষ সংরক্ষণ করে থাকে। মানুষের বিপদ ডেকে আনার জন্য এর খুব সামান্য পরিমাণ বিষই যথেষ্ট।

বাট্রাকোটক্সিন নামক বিষ থাকে এই ব্যাঙে যা অল্প সংখ্যক প্রাণীর মধ্যে পাওয়া যায়। একটি ব্যাঙ ১৯০০ মাইক্রোগ্রাম বিষ বহন করে থাকে। দুই দানা লবণের পরিমাণ বিষ একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। এই বিষ আক্রান্ত ব্যাক্তির স্নায়ুকে অকার্যকর করে ফেলে, যার ফলে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং এই বিষ এতটাই ভয়ংকর যে আক্রান্ত ব্যক্তি ১০ মিনিটের মধ্যে মারা যেতে পারে; আরও ভয়ংকর হচ্ছে, এর কোনো প্রতিকারও নেই!

জঙ্গল কমে যাওয়ার ফলে ধীরে ধীরে কমছে ‘ভয়ংকর সুন্দর’ এই প্রাণীটি। বিপন্নপ্রায় বাহারি রঙের এই ব্যাঙের দেখা মেলে মধ্য আমেরিকা এবং কলোম্বিয়ার রেইন ফরেস্টে। তবে সুন্দর এই ব্যাঙ কখনো সামনে পেলে এর সৌন্দর্যের মোহে পড়ে স্পর্শ করতে যাবেন না যেন! সব সুন্দর না যায় ছোঁয়া!

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

আগামী ৯ মে থেকে শুরু হচ্ছে চলতি মৌসুমের হজ ফ্লাইট

সৌন্দর্য কাছে টানে, ছোঁয়াতেই মৃত্যু

আপডেট সময় ০৩:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০২৩

আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে নানা ধরনের বিষাক্ত প্রাণী ও পতঙ্গ। যেগুলোর কামড়ে রয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং এর ফলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। বিষাক্ত পতঙ্গ বা প্রাণীর কথা শুনলে প্রথমেই মাথায় আসে সাপ, বিচ্ছু কিংবা বিষাক্ত মাকড়সার কথা। কিন্তু জানেন কি? বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত প্রাণীর তালিকায় রয়েছে আপনার পরিচিত এমন ছোট একটি প্রাণী; যার শরীরে এতটাই বিষ যে, তা দিয়ে অনায়াসেই মেরে ফেলা যাবে দশজন তরতাজা মানুষ! দুই ইঞ্চির ছোট একটা পেপার ক্লিপের আকারের প্রাণীটা হলো ব্যাঙ! যার কিতাবি নাম ‘গোল্ডেন পয়জন ডার্ট ফ্রগ’ বা ‘গোল্ডেন পয়জন ফ্রগ’।

‘গোল্ডেন পয়জন ডার্ট ফ্রগ’ ব্যাঙটি প্রথম আবিষ্কৃত হয় ১৯৭৩ সালে এবং বৈজ্ঞানিক অন্তর্ভুক্তিতে আসে ১৯৭৮ সালে। বৃহত্তম প্রজাতির পয়জন ফ্রগের মধ্যে ‘গোল্ডেন পয়জন ডার্ট ফ্রগ’ অন্যতম। কলোম্বিয়ার রেইন ফরেস্টের চোকো ও এম্বেরা আদিবাসীরা তাদের শিকারের ‘ডার্ট’ তথা ছোট আকারের বিশেষ তীর বা বাণ বিষাক্ত করার জন্য এই ব্যাঙের বিষ ব্যবহার করে। এমনকি এই বিষ যুদ্ধেও ব্যবহৃত হত বলে ধারণা করা হয়। জীবন্ত ব্যাঙের পিঠে ডার্টের ডগা ঘষলেই সেখানে বিষ লেগে যায় এবং সে বিষ শুকিয়ে গেলে পরবর্তী এক বছর পর্যন্ত ডার্টে সক্রিয় থাকে। একটি ব্যাঙ দুই বা তিনটি ডার্টের জন্য যথেষ্ট বিষ সরবরাহ করে থাকে। বিষ সংগ্রহের পর ব্যাঙটিকে অক্ষত অবস্থায় বনে ছেড়ে দেওয়া হয়। আদিবাসীরা সাধারণত স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং পাখি শিকারে এই ডার্ট ব্যবহার করে থাকে। আদিবাসীদের এভাবে এই ব্যাঙ ব্যবহারের ফলে এর নাম হয়েছে ‘গোল্ডেন পয়জন ডার্ট ফ্রগ’।

গোল্ডেন পয়জন ডার্ট ফ্রগ বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে; যেমন, সোনালি-কমলা, সোনালি-হলুদ বা ফ্যাকাশে সবুজ। বাচ্চা গোল্ডেন পয়জন ডার্ট ফ্রগ কালো রঙের হয় এবং পিঠের দিকে থাকে সোনালি ডোরাকাটা। এই জাতের প্রাপ্তবয়স্ক ব্যাঙের আকার ৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

এরা সাধারণত ভূমিতে বসবাস করে এবং স্ত্রী ব্যাঙ মাটিতেই ডিম পাড়ে। পরে পুরুষ ব্যাঙ ব্যাঙ্গাচিগুলোকে পিঠে বহন করে স্থায়ী জলাশয়ে নিয়ে যায়। এদের খাদ্যের মধ্যে রয়েছে মাছি, বিটোল, পিঁপড়া, উইপোকা ইত্যাদি অমেরুদণ্ডী প্রাণী। একটি গোল্ডেন পয়জন ডার্ট ফ্রগ সাধারণত ৬ থেকে ১০ বছর বাঁচে।

এই ব্যাঙের ভয়ংকর বৈশিষ্ট্য হলো, মানুষের প্রাণনাশের জন্য একে সাপ বা মাকড়সার মতো কামড় বসাতে হয় না; বরং এই ব্যাঙকে ছুঁলেই ঘটে যেতে পারে মৃত্যু। ‘গোল্ডেন পয়জন ডার্ট ফ্রগ’ তাদের ত্বকের গ্রন্থিতেই বিষ সংরক্ষণ করে থাকে। মানুষের বিপদ ডেকে আনার জন্য এর খুব সামান্য পরিমাণ বিষই যথেষ্ট।

বাট্রাকোটক্সিন নামক বিষ থাকে এই ব্যাঙে যা অল্প সংখ্যক প্রাণীর মধ্যে পাওয়া যায়। একটি ব্যাঙ ১৯০০ মাইক্রোগ্রাম বিষ বহন করে থাকে। দুই দানা লবণের পরিমাণ বিষ একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। এই বিষ আক্রান্ত ব্যাক্তির স্নায়ুকে অকার্যকর করে ফেলে, যার ফলে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং এই বিষ এতটাই ভয়ংকর যে আক্রান্ত ব্যক্তি ১০ মিনিটের মধ্যে মারা যেতে পারে; আরও ভয়ংকর হচ্ছে, এর কোনো প্রতিকারও নেই!

জঙ্গল কমে যাওয়ার ফলে ধীরে ধীরে কমছে ‘ভয়ংকর সুন্দর’ এই প্রাণীটি। বিপন্নপ্রায় বাহারি রঙের এই ব্যাঙের দেখা মেলে মধ্য আমেরিকা এবং কলোম্বিয়ার রেইন ফরেস্টে। তবে সুন্দর এই ব্যাঙ কখনো সামনে পেলে এর সৌন্দর্যের মোহে পড়ে স্পর্শ করতে যাবেন না যেন! সব সুন্দর না যায় ছোঁয়া!